ঢাকা, শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন: ৬ বছর চলার পর বদলাচ্ছে প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ৩ অগাস্ট ২০২২ ১০:০৯:০০ পূর্বাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

 

এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ২০১৪ সালে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। আর কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। তবে ৮ বছর আগের সেই পরিকল্পনা এখন আর থাকছে না। প্রথমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আদলে নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও এখন ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের আদলে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। এজন্য আগের নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের আওতায় নতুন নতুন অবকাঠামোও সংযোজন করা হয়েছে। নতুন করে যানবাহনের গতিবেগ ধরা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার। ২০১৪ সালে যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয় তার কিছুই এখন প্রকল্পে রাখা হচ্ছে না।

উত্তরবঙ্গে শিল্প কারখানা প্রসারসহ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে চার লেন করা হচ্ছে এলেঙ্গা থেকে রংপুর মহাসড়ক। রংপুর থেকে বুড়িমারি ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মহাসড়কটি। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ করতে ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি চার লেনে রূপ দেওয়া হচ্ছে।

 ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়েছে। এতে সবার চোখ খুলে গেছে। তাই নতুন করে এলেঙ্গা-রংপুর ১৯০ কিলোমিটার ফোর লেন এক্সপ্রেসওয়ের আদলে তৈরি করবো। এজন্য নানা ধরনের অবকাঠামো সংযোজন করা হবে। 

তবে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও সার্বিক কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। ২০২১ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ ধরা ছিল। বর্তমানে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ।

চলমান প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নানা ধরনের দুর্বল দিক ও ঝুঁকি তুলে ধরেছে সরকারের প্রকল্প তদারকি প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

আইএমইডি জানায়, প্রকল্পের যথাযথভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নকালে বারবার নকশা পরিবর্তন এবং নকশায় নতুন অবকাঠামো সংযোজন করা হয়। ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে দীর্ঘসূত্রতা এবং ইউটিলিটি স্থাপনা স্থানান্তর সংক্রান্ত জটিলতা দেখা গেছে। এছাড়া ভূমিকম্প ও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে নির্মাণাধীন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বগুড়া, গোবিন্দগঞ্জ ও রংপুর জেলার বেশ কিছু স্থানে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন হয়নি। প্রকল্প চলাকালে নির্মাণসামগ্রীর দামের ঊর্ধ্বগতি এবং নতুন শুরু হওয়া প্যাকেজসহ বেশ কিছু প্যাকেজের নির্মাণ কাজে ধীরগতি দেখা গেছে। ফলে বারবার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ছে নির্মাণাধীন গুরুত্বপূর্ণ ফোর লেনটির। সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়রা। একইসঙ্গে সুফল পাচ্ছেন না উত্তরবঙ্গবাসী। ঈদের সময় এই পথে তৈরি হয় ভয়াবহ জটলা।

ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়নি আইএমইডি’র এমন রিপোর্ট প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক ড. মো. ওয়ালিউর রহমান বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়েছে। একেক জন একেকভাবে চিন্তা করে এটা হয়েছে। ২০১৪ সালের চিন্তা মাথায় রেখে ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়েছে। এখন চলছে ২০২২। ২০১৪ সালের বাংলাদেশ আর ২০২২ সালের বাংলাদেশ এক নয়। ২০১৪ সালের পরিকল্পনায় চলমান প্রকল্পে অনেক ব্রিজ, রেলওয়ে ব্রিজ, আন্ডারপাস ছিল না। এমনকি ফ্লাইওভারও ছিল না। আমরা দেখেছি ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়েছে। এতে সবার চোখ খুলে গেছে। তাই নতুন করে এলেঙ্গা-রংপুর ১৯০ কিলোমিটার ফোর লেন এক্সপ্রেসওয়ের আদলে তৈরি করবো। এজন্য নানা ধরনের অবকাঠামো সংযোজন করা হবে। টাঙ্গাইল থেকে রংপুর কোনো বাধা থাকবে না।

উত্তরবঙ্গে শিল্প কারখানা প্রসারসহ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে চার লেন করা হচ্ছে এলেঙ্গা থেকে রংপুর মহাসড়ক। রংপুর থেকে বুড়িমারি ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মহাসড়কটি। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা মসৃণ করতে ১৯০ কিলোমিটার সড়কটি চার লেনে রূপ দেওয়া হচ্ছে। 

প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রথমে জমি অধিগ্রহণ দেড়গুণ দেওয়া হতো। এখন এটা বেড়ে তিনগুণ হয়েছে। এসব কারণেই মূলত ব্যয় বেড়েছে।

১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে আগস্ট ২০২১ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়ায় ডিসেম্বর ২০২৪ সাল নাগাদ।

কাজ চলছে ধীরগতিতে

আইএমইডি জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুযায়ী প্রকল্পের অনুকূলে ব্যয় পরিকল্পনা ছিল ৩ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। এডিপি বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। এডিপি বরাদ্দের বিপরীতে এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত ব্যয় হয় ১ হাজার ৩১৪ কোটি বা ৫৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। অর্থাৎ শুধু এক অর্থবছরে ৪৩ দশমিক ৮১ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে। এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত বাস্তব অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা যা মোট ব্যয়ের ৩৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ।