ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে বৈধ ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেছেন।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তা বৈধ ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে আগামী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেখানে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে গত ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতের একমাত্র মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মির নিয়ে প্রতিবেশি পাকিস্তানের সঙ্গে বিবাদ চলে আসছে।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন নরেন্দ্র মোদির সরকার। পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মিরকে দ্বিখণ্ডিত করে জম্মু-কাশ্মির এবং লাদাখ নামে কেন্দ্রশাসিত দুটি অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
পরে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে এক ডজনের বেশি আবেদন করা হয়। প্রায় সাড়ে চার বছর পর সোমবার এই আবেদনের শুনানি শেষে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে রায় ঘোষণা করেছেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন সঞ্জয় কিষাণ কল, সঞ্জীব খান্না, বি আর গাভাই এবং সূর্য কান্ত।
সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, ভারতের সাথে একীভূত হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে জম্মু-কাশ্মিরের সাংবিধানিক বিধানসভার আর অস্তিত্ব নেই। আর জম্মু-কাশ্মিরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের যে অধিকার দেওয়া হয়েছিল, তা অস্থায়ী ছিল
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মিরের সাংবিধানিক বিধানসভার স্থায়ী সংস্থা করার উদ্দেশ্য ছিল না। কেবল সংবিধান প্রণয়নের জন্য এটা গঠন করা হয়েছিল। সাংবিধানিক বিধানসভার সুপারিশ করা রাষ্ট্রপতির জন্য বাধ্যতামূলকও ছিল না।
ভারতের সাথে একীভূত হয়ে যাওয়ার পরও কেন জম্মু ও কাশ্মির বিশেষ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করেছে, তার ব্যাখ্যায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, কারণ জম্মু-কাশ্মিরের অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব ছিল না।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, ‘‘দেশের সব রাজ্যের আলাদা আলাদা বিধানসভা এবং কার্যনির্বাহী ক্ষমতা রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার উদাহরণ সংবিধানের ৩৭১-এ থেকে ৩৭১-জে অনুচ্ছেদ। এটা ফেডারেলিজমের উদাহরণ... জম্মু ও কাশ্মিরের অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব অন্যান্য রাজ্য থেকে আলাদা নয়।’’