প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করেছে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি। এই তালিকা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটি। তাদের কাছ থেকে পাওয়া নামের তালিকা থেকে সিইসিসহ পাঁচজনের কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর আগে ওই ১০ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে সিইসি হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক এবং সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সিইসি কে হচ্ছেন- গতকাল সার্চ কমিটির একজন সদস্যের কাছে জানতে চাইলে তিনি হেসেন বলেন, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তবে আপনারা পত্র-পত্রিকায় যাদের নাম লিখেছেন তারাই আলোচনায় রয়েছেন। কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটি ও সাচিবিক দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। এ জন্য গতকালই তারা কভিড-১৯ পরীক্ষা করেছেন। যাদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে তারা সবাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে বঙ্গভবনে যাবেন। সেখানে তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করে আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ জনের নামের তালিকা হস্তান্তর করবেন। সেই তালিকা থেকেই রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবেন। তবে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে ওই তালিকার বাইরের যোগ্য কোনো ব্যক্তিকেও মনোনয়ন দিতে পারেন। সেটি ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। রাষ্ট্রপতির সম্মতি সাপেক্ষে আজ রাতেই প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সার্চ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনিক কাজে দক্ষ এবং সব মহলে গ্রহণযোগ্য লোকই আসতে পারেন সিইসি পদে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র আভাস দিয়েছে, এই পদে কোনো সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব বা সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান কেউ থাকছেন না। তাদের মতে, সেনাপ্রধান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদ দুটি এখন পর্যন্ত সব ধরনের বিতর্কমুক্ত রয়েছে। রাষ্ট্রীয় দুটি গুরুত্বপূর্ণ এই পদে থাকা ব্যক্তিরা যেন ভবিষ্যতে কোনো ধরনের বিতর্কে না জড়ান সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা খুবই সতর্ক। গতবারও সিইসি পদে সাবেক একজন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নাম সর্বত্র আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি নিয়োগ পাননি। এবারও সে রকম কিছু ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সিইসি পদে আলোচনায় শীর্ষে রয়েছেন সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক এবং সাবেক প্রতিরক্ষা সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। এই দুজনের যে কোনো একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে আসতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আশির দশকের স্বনামধন্য কবি ও গবেষক সাবেক শিক্ষা সচিব এবং বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ১৩তম চেয়ারম্যান ছিলেন ড. মোহাম্মদ সাদিক। বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ব্যাচের কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ সাদিক শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচন কমিশনের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয় আছেন। তিনি বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের জীবন-সদস্য। এ ছাড়া জাতীয় কবিতা পরিষদ ও বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। কবিতায় অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া সিইসি পদে আলোচনায় রয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা কর্মজীবন শুরু করেন জেলা মুনসেফ হিসেবে। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নাম প্রস্তাব করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ আরও অনেকে। সার্চ কমিটির সঙ্গে বিশিষ্টজনদের বৈঠকে অন্তত ১০ জনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এর মধ্যে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নামও ছিল। এ ছাড়া চারজন নির্বাচন কমিশনারের বিপরীতে করা আটজনের তালিকায় আছেন দুজন শিক্ষক, দুজন নারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন, সাবেক একজন জেলা ও দায়রা জজ এবং সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তার নাম। মঙ্গলবার বিকালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকে ১০ জনের নামের চূড়ান্ত করা হয়।
জানা গেছে, এবারই প্রথম আইন অনুযায়ী ইসি গঠিত হচ্ছে। আইন অনুসারে, এ তালিকা থেকে পাঁচজনকে বেছে নিয়ে রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন ইসির কাঁধেই থাকবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব। ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আইন পাসের পর ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দুটি বৈঠক করে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিপর্যায়ে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারের নাম আহ্বান করে। এরই মধ্যে চার দফায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিটি। এরপর নিবন্ধিত দুই ডজন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ছয় পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে পাওয়া ৩২২ জনের নাম পাওয়া যায়। বিএনপিসহ ১৫টি রাজনৈতিক দল নাম দেয়নি। ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর পরও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠকে আরও কিছু নামের প্রস্তাব আসে। সেই তালিকা থেকে প্রথমে ৪০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা, পরে পর্যায়ক্রমে তা ১২-১৩ জনে নামিয়ে আনা হয়। এরপর মঙ্গলবারের বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয় ১০ জনের নামের তালিকা।