ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৯ মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১
ইতিহাস ও ঐতিহ্য

খাগুড়িয়া কালীমাতা মন্দির

কামরুল হাসান: | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০১:৪২:০০ অপরাহ্ন | সাহিত্য

ইতিহাসের কালের পাতার ভাজে ভাজে অনেক অজানা ঘটনা বা কাহিনী রয়েছে। যা আমরা তার খবর রাখিনা। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘একটি শিশির বিন্দু’ কবিতার কথায়- “বহু দিন ধরে, বহু ক্রোশ দূরে/বহু ব্যয় করি/ বহু দেশ ঘুরে/দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা/দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু/দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ঘর হইতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/একটি ধানের শিষের উপর/একটি শিশির বিন্দু।” তেমনি আমাদের দেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে কোথাও কোথাও অপরূপ দৃশ্য রয়েছে বৈ কি। পাশাপাশি অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বা ঘটনাও রয়েছে। আমরা কেউ তার খোঁজ রাখি আবার কেউ রাখি না। যেমন- জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলাধীন মহাদান ইউনিয়নের খাগুড়িয়া গ্রামে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ‘খাগুড়িয়া কালীমাতা মন্দির।’ হিন্দু অধ্যুষিত এ অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনার জন্যই এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ মন্দিরটি ঠিক কবে প্রতিষ্ঠা বা স্থাপন হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস কেউ জানে না। স্থানীয় বয়োজেষ্ঠ্যরা জানান, তারাও তার বাপ-দাদার মুখে এ মন্দিরের কথা শুনে এসেছে। তারাও নাকি তাদেরও বাপ-দাদাদের কাছ থেকে এ মন্দিরের কাহিনী শুনেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, ২/৩ শতেকেরও বেশি আগে এ মন্দির স্থাপিত হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, তারও অনেক আগেই এ মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে। মোট কথা এ মন্দিরটির স্থাপনকাল যাই হোক- স্থানীয় ডা. রামকমল পন্ডিত উনিশ শতকের প্রথমদিকে নিজ অর্থ ব্যয়ে এটি সংস্কার করে ভক্ত/পূজারীদের পূজা অর্চনার পরিবেশের সুযোগ করে দেন। এ থেকে ভক্তবৃন্দের উপাসনার নতুন দুয়ার খুলে। তাই গানের কথায়- ‘দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে।’ মূলত স্থানীয় ও অস্থানীয় ভক্তবৃন্দের দান-অনুদানে এ মন্দির সংস্কার, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষন ব্যবস্থাপনার কাজ চলে আসছে। প্রায় দেড় একর জমির উপর এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত। এ মন্দিরকে ঘিরে বাংলা বছরের প্রত্যেক অগ্রহায়ণ মাসের শেষ শনিবার এখানে বাৎসরিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে বারুনী স্নানের জন্যই এ উৎসবের আয়োজন। আবার এ উৎসবকে কেন্দ্র করে এখানে মেলাও বসে। মেলায় পূজা উপকরণ, গৃহস্থালি তৈজসপত্র, খেলনা ও বিভিন্ন খাবারের পসরা বসায় দোকানিরা। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকেও ভক্তরা আসেন এ মন্দিরে। সারাদিন ভক্তবৃন্দের পূজা-অর্চনা ও নানা আচার-নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ভক্তবৃন্দ মনের অন্তঃমূলে পোতিত বিশ্বাসের বীজ বপন করেন। এ আশায় যে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে দিবেন কালীমাতা। তাই তারা বিভিন্ন মানত, মোম-আগরবাতি, মিষ্টান্ন দ্রব্য ও অন্যান্য উপকরণসহ নগদ অর্থ মায়ের চরণে নিবেদন করেন। এতে লাখ লাখ টাকা জমা হয় মন্দির কোষাগারে। মন্দির পরিচালনায় মূল কমিটির পাশাপাশি বিভিন্ন উপ-কমিটিও রয়েছে। মূল কমিটির সভাপতি বাবু রমেশ চন্দ্র সূত্রধর, সহ-সভাপতি বাবু দীপক কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাবু কালাচান পাল দায়িত্ব পালন করছেন। উল্লেখ্য সহ-সভাপতি বাবু দীপক কুমার সাহা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কোষাধ্যক্ষের চলতি দায়িত্বও পালন করছেন। ভক্তদের মধ্য থেকে অনেকেই অর্থনৈতিক বিষয়ে নানা নেতিবাচক ইঙ্গিত করেছেন। তাই দায়িত্বপ্রাপ্তদের এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করা উচিত বলে মনে করেন অনেকেই। তাই পরিশেষে বলতে হয়- ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।’

 

(লেখক: সাংবাদিক ও ডিরেক্টর, বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব, ঢাকা এবং সাবেক শিক্ষক ও এনজিও কর্মকর্তা)