ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৯ মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

গদখালী ফুলচাষিদের মুখে হাসি

যশোর প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:২৪:০০ অপরাহ্ন | গণমাধ্যম

ফুলের রাজ্যখ্যাত যশোরের গদখালী। এ এলাকার কৃষক মো. সোবহান। করোনার প্রকটের কারনে  গত দুই বছর মোটেও ফুল বিক্রি করতে পারেননি তিনি। চলতি বছর বুদ্ধিজীবী দিবস আর বিজয় দিবসে লক্ষাধিক টাকার ফুল বিক্রি করেছেন তিনি। এমনকি ফুলের দাম ভালো পাওয়ায় সোবহানসহ অত্র এলাকার ফুলচাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির (বিএফএস) কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, যশোর জেলার আট উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। তার মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। প্রায় দুই বছর ধরে করোনাভাইরাস, লকডাউন, ঝড়ে ফুলচাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত তিন দিনে দেড় কোটি টাকার ফুল বিক্রি হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।

মো. সোবহান জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে কিছু দিন আগেও ফুল চাষিদের গলার ফাঁস হয়ে তাদের সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছিল। চলতি বছরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ফুলের ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম থাকায় সেই ফাঁস এখন চাষিদের গলার মালা হয়ে ধরা দিয়েছে। 

দুই দিবস ঘিরে আগের তুলনায় বেচাকেনা বেড়েছে গদখালীর ফুল বাজারে। চাহিদা বেশি থাকায় আগের বাজারদর থেকে বেশি দামে ফুল বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন ভোরে ফুলের হাট বসে গদখালীতে। গত তিন দিনে বাজারটিতে দেড় কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে গাঁদা ফুল।

সম্প্রতি বাজারে প্রতি হাজার গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে ৮ থেকে ৯শ’ টাকা দরে। যা আগে ছিল দেড়শ’ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আড়াই ৩শ’ টাকা। একেকটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৪ থেকে ৬ টাকায়, যা আগে ছিল দেড় থেকে ২ টাকা। রজনীগন্ধা  স্ট্রিক বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৮ থেকে ১০ টাকায়, যা আগে ছিল ৭/৮ টাকা। রঙিন গ্লাডিউলাস প্রতিটি মান ভেদে বিক্রি হয়েছে ৬ থেকে ১৫ টাকায়, যা আগে ছিল ৩ থেকে ৬ টাকা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকায়, যা আগে দাম ছিল ৬ থেকে ৮ টাকা। ফুল বাঁধার জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা আঁটি, যা আগে ছিল ৩০/৩৫ টাকা। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। যা আগে বিক্রি হতো ২০ থেকে ২৫ টাকায়। 

স্থানীয় ফুলচাষিরা জানিয়েছেন, মাস খানেক আগ থেকে বর্তমানে প্রতিটি ফুল দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। আসছে ১৩ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আগ মুহূর্তে ফুলের দাম আরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা প্রায় দুই বছরের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ও ঘূর্ণিঝড়ে সারা বছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে তারা আশা করছেন। 

পানিসারার পটুয়াপাড়া গ্রামের ফুল চাষি লোকমান শেখ বলেন, করোনার কারণে গত বছর এই সময়ে ১০ হাজার টাকার ফুলও বিক্রি করতে পারেনি। এবার ১৫ কাটা জমির জারবেরা আর দেড় বিঘা জমির গাঁদা থেকে এই দুই দিবসে ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছি। করোনায় সারা বছর ফুল বিক্রি ছিল না। আশা করছি, সামনের চারটি অনুষ্ঠানে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। হাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন, দেড় বিঘা জমিতে চীনের লংস্টিক রোজ জাতের গোলাপ ফুলের চাষ এ অঞ্চলে আমিই প্রথম শুরু করেছিলাম। করোনা পরিস্থিতিতে ফুল বিক্রি হয়নি। বাগান পরিচর্যায় খরচও বেড়েছে। যে কারণে বাগান পরিচর্যা প্রায় বাদ দিয়েছিলাম। এবার করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ফুল চাষ শুরু করি।  চলতি মাসে (ডিসেম্বর) থেকে ফুলের চাহিদা বেড়েছে। সেইসঙ্গে আগের চেয়ে দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। বিজয় দিবস উপলক্ষে ৭০ হাজার টাকার মতো ফুল বিক্রি হয়েছে। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দুই লাখ টাকার গোলাপ ও দেড় লাখ টাকার চীনের লং স্টিক ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি। 

হাঁড়িয়া গ্রামের আশরাফ হোসেন বলেন, ১৭ কাঠা জমির গাঁদা ফুল বিক্রি করেছি ৭০ হাজার টাকায়। গত বছর মে মাসে আম্পানের সময় একই খেতে গাঁদা ফুল চাষ করেছিলাম। তখন মাত্র দুশ টাকার ফুল বিক্রি করতে পেরেছি।