মাদারীপুরে এক কলেজছাত্রীকে সরকারি লাইব্রেরী থেকে বই চুরির অভিযোগে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা লাইব্রেরীয়ান বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে। নির্যাতিত ওই কলেজছাত্রী লজ্জায়, অপমানে ঘুমের ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। এই ঘটনায় রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেকরা বেলায়েত হোসেনের শাস্তির দাবীতে মানবন্ধন কর্মসূচী ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
স্থানীয় ও স্মারকলিপি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে মাদারীপুর পৌর শহরের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও মাদারীপুর সুফিয়া মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগে একাদশ বর্ষের শিক্ষার্থী তার দুই বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে সরকারি গণগ্রন্থাগারে (পাবলিক লাইব্রেরীতে) গিয়ে বই নিয়ে পড়ার টেবিলে পড়তে থাকে। কিছুক্ষণ পর লাইব্রেরীর পাশের রুমে বসা ওই শিক্ষার্থীর প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে বই পড়া বিষয়ক একটি বিষয় বুঝতে যাওয়ার জন্য টেবিল থেকে উঠতে গেলে জেলা লাইব্রেরীয়ান বেলায়েত হোসেন ডাক দিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে গায়ে হাত দিয়ে শারীকি ভাবে নির্যাতন করে এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করে। তখন ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বেলায়েত হোসেন বই লাইব্রেরী থেকে বই চুরির অভিযোগ তোলে। উপস্থিত পাঠকদের সামনে এমন একটি কান্ড ঘটানোর কারণে ওই শিক্ষার্থী মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। বাড়িতে এসে লজ্জায়, অপমানে অত্মহত্যার চেষ্টার জন্য ওই ছাত্রী অতিরিক্ত মাত্রার ঘুমের ঔষুধ খায়। এই ঘটনায় রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সমানে মাদারীপুরের সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জেলা লাইব্রেরীয়ান বেলায়েত হোসেনের শাস্তি ও অপসারণের দাবীতে মানবন্ধন কর্মসূচী ও স্মারকলিপি প্রদান করে।
মানবন্ধনে অংশ নিয়ে নির্যাতিত শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে বই চুরির মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ওই লাইব্রেরীয়ান বেলায়েত হোসেন কেন মারধর করলো এবং অপমান করলো। লজ্জায় আমার মেয়ে ঘুষের ঔষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছিল। আমি এই ঘটনায় দোষী বেলায়েত হোসেনের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার চাই।
শিক্ষার্থীর চাচা বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবী, আমার ভাতিজির সাথে যে ঘটনা ঘটিয়েছে ওই লাইব্রেরীয়ান সেটা যেন আর কারো সাথে করতে না পারে। সেই জন্য তার সঠিক বিচার হওয়া উচিত। এবং আমরা সেটাই দাবী করছি।’
ওই কলেজ ছাত্রী বলেন, ‘বেলায়েত হোসেন আমাকে একদম বিনা কারণে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করেছে। আমি সবার কাছে ন্যায় বিচার চাই।’
এসময় মানবন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন দৈনিক কালের কন্ঠের পাঠক সংগঠন শুভসংঘের মাদারীপুর শাখার সহ-সভাপতি এস.এম.আরাফাত হাসান, বিডিক্লিনের জেলা সমন্বয়ক জোবায়ের হোসেন জাহিদ, দুরন্ত মাদারীপুরের সমন্বয়কারী রাকিব হাসান বকুল, নকশীকাথার প্রতিষ্ঠাতা ও সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশীসহ অন্যরা।
এসময় বক্তারা অনতিবিলম্বে জেলা লাইব্রেরীয়ান মাদারীপুর থেকে অপসারণ ও তার শাস্তির দাবী জানান এবং মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এই বিষয়ে জেলা লাইব্রেরীয়ান বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমি মেয়েটিকে একটু রাগারাগি করেছি এটা সত্য। কিন্তু তারপরেই তার কাছে সবার সামনেই ক্ষমা চেয়েছি। তারপরও সে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঝামেলা করতেছে। আমার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার পরেও যদি এমন করে; তাহলে আমার বলার কিছু নেই।