গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় যেখানে সেখানেই ফেলা হচ্ছে ময়লা। দুর্গন্ধ আর ময়লা পানিতে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে সড়কে চলাচল। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে শিববাড়ি সড়ক, ভোগড়া বাইপাস, তেলিপাড়া, কোনাবাড়ি, বাইমাইল, টঙ্গী, জয়দেবপুর রেল জংশন সবখানেই ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে ময়লা আবর্জনার স্তূপ।
গাজীপুর সিটিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রকল্প আছে বাস্তবায়ন নেই। কারণ দূর থেকে দেখে মনে হবে শহরের বুকে একখণ্ড পাহাড়। কিন্তুু বাস্তবে এটি ময়লার পাহাড়। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কড্ডা এলাকায় আবর্জনার স্তূপ জমতে জমতে গত কয়েক বছরে পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। আবর্জনার এ স্তূপ থেকে বাতাসে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিশাল পরিকল্পনা ও প্রকল্প থাকলেও বাস্তবে কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছে না নগরবাসী।
সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা জানতে পারি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সিটি কর্পোরেশনের হাতিয়াবহ এলাকায় একশ বিঘা জমি কেনা হবে। প্রকল্পের আওতায় এসব বর্জ্য কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হবে জৈব সার, পেট্রল ও বিদ্যুৎ। প্রকল্প চালু হতে কতদিন লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউ। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন ১২ নাম্বার ওয়ার্ডের বাইমাইল এলাকায় ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘেঁষেই বিশাল আবর্জনার পাহাড় তৈরি হয়েছে।
১০-১২ বছর ধরে ময়লা আবর্জনা ফেলতে ফেলতেই তৈরি হয়েছে এ পাহাড়। সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের সব ময়লা আবর্জনা গাড়ী দিয়ে এনে ফেলা হচ্ছে ওই স্থানে। পরে ভেকু দিয়ে আবর্জনা উঁচু করতে করতে পাহাড়ে পরিণত করেছে। এখন এই আবর্জনার পাহাড় মাটি থেকে প্রায় ৮০-১০০ ফুট উঁচু হয়ে উঠেছে। এসব আবর্জনা থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। বাতাসের সঙ্গে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে, এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। দুর্গন্ধে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।
ময়লা আবর্জনার কারণে আশপাশের এলাকায় বেড়েছে মশা, মাছির বৃদ্ধি। ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চলাচলরত যানবাহনের যাত্রীদেরও অসুবিধায় ফেলছে মশা, মাছি এবং দুর্গন্ধ। আশপাশের দোকানপাট ও খাবার হোটেলেও অত্যাচারে ভুগছেন মশা, মাছির, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ বাড়ছে রোগ জীবাণুর বৃদ্ধি। দুর্গন্ধের কারণে গত ১১-১২ বছর মহাসড়কটিতে যাত্রীদের চলাচল করতে হয় নাকে মুখে রুমাল চেপে ধরে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এসব বর্জ্য দিয়ে জৈব সার, গ্যাস, পেট্রল ও বিদ্যুৎ তৈরিরও কথা জানায় তারা। কিন্তুু বাস্তবে এসব কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে সন্ধ্যার পর নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে খোলা ভ্যান ও ট্রাকে ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। সকালে ওই বর্জ্য সিটি কর্পোরেশনের গাড়ী এসে নিয়ে যায় কড্ডা এলাকায় ফেলার জন্য। দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তার মাঝখানে পড়ে থাকা এসব বর্জ্যের কারণে পচা দুর্গন্ধ ছড়ায়, এতে করে সাধারণ মানুষের চলাচল অবস্থায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দা আবির মাহমুদ বলেন, প্রতিদিন খোলা ভ্যান ও ট্রাকে ময়লা পরিবহনের ফলে রাস্তার চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
টঙ্গী এলাকার গার্মেন্টস কর্মী আকরাম ইসলাম বলেন, ময়লা আবর্জনা নিয়ে খুব বিপদের মধ্যে আছি। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখায় পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এসএম সোহরাব হোসেন জানায়, এখন পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর, মিরেরবাজার যাওয়ার পথে ও বাইমাইল এলাকায় ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। চীনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, খুব শীঘ্রই একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।
এজন্য গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের হাতিয়াবহ এলাকায় একশ বিঘা জমি কেনা কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় এসব বর্জ্য কাজে লাগিয়ে জৈব সার, পেট্রল ও বিদ্যুৎ তৈরি করা হবে। এ প্রকল্প চালু হতে কতদিন লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কনজারভেন্সি পরিদর্শক মদন চন্দ্র দাস বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন গাজীপুর সিটি থেকে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন ময়লা আবর্জনা বের হচ্ছে।
এর মধ্যে ৩ হাজর ৫০০ মেট্রিক টন ময়লা আবর্জনা প্রতিদিন সিটি কর্পোরেশন সংগ্রহ করে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বর্তমানে তাদের প্রায় ৫০০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও ১০০টি যানবাহন রয়েছে। ময়লার ওপর বিদ্যুতের তার থাকায় ভেকু দিয়ে কাজ করার সময় কয়েকবার বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নয়ন মিয়া জানায়, সড়কের পাশে আবর্জনা না ফেলতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও সিটি কর্পোরেশন থেকে যেখানে সেখানে নিয়মিত ময়লা ফেলে যাচ্ছে তারা।