হাজারো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন কৃষ্ণা রানী সরকার। শ্রেষ্টত্বের মুকুট জয় করে গোপালপুর উপজেলার উত্তর পাথুলিার প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে ঘরে ফিরছেন। তাই আনন্দের জোয়ারে যেন ভাসছে পুরো গ্রাম। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তর পাথালিয়া গ্রামে সাজসাজ রব পড়ে যায়। কৃষ্ণাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য তাদের বাড়িতে প্যান্ডেল তৈরী করা হয়। গ্রামের শত শত মানুষ অপেক্ষা করে কৃষ্ণাকে এক নজর দেখার জন্য। কখন আসবে তাদের মেয়ে। প্রতিক্ষার পালা যেন তাদের শেষ হচ্ছিল না। এছাড়াও কৃষ্ণাকে বরণ করার জন্য তৈরী ছিল গোপালপুর সূতী ভিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে ৩-১ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশকে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা এনে দেন মেয়েরা। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে বাংলাদেশ ভাসে আনন্দের জোয়ারে। সেখানে কৃষ্ণা রাণী সরকারের জোড়া গোলে হিমালয় কন্যাদের পরাজিত করে। তাই সারাদেশের সাথে টাঙ্গাইলের গোপালপুরেও আনন্দের বন্যা বইয়ে যায়।
কৃষ্ণার ছোট ভাই পলাশ চন্দ্র সরকারকে সাথে নিয়ে বেলা আড়াইটার দিকে একটি প্রাইভেটকারে চেপে গোপালপুর সূতী ভিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আসেন। তখন স্কুলের শত শত শক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন। এসময় বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান তার মুখে মিষ্টি তুলে দেন। কৃষ্ণাও সবাইকে মিষ্টি খাওয়ান। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ সময় তার অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কৃষ্ণাও তাদের অটোগ্রাফ দেন ও সাথে ছবি তুলেন।
বিদ্যালয়ে সংবর্ধনা শেষ করে ক্রীড়া শিক্ষককে নিয়ে গ্রামের বাড়ি উত্তর পাথালিয়া গ্রামের বাড়িতে রওয়ানা হন। তখর রাস্তার দুই পাশ থেকে শত শত মানুষ হাত নেড়ে কৃষ্ণাকে শুভেচ্ছা জানান।
বেলা চারটার দিকে বাড়িতে এসে পৌঁছলে প্রথমেই তার মা তাকে দুর্বা ও ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। মা মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় তারা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে তাকে প্যান্ডেলের মঞ্চে বসিয়ে সবাই ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
এ সময় কৃষ্ণা রানী সরকার বলেন, পৃথিবীর আলো দেখার পর কখনোই সুখের মুখ দেখিনি। যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি, সেদিন থেকেই বাবাকে কষ্ট করতে দেখেছি। মা অনেক কষ্ট করেছে। এই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে দিয়ে ফুটবল খেলতে হয়েছে। সব বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে আজ এখানে আসতে পেরেছি। আমার এই সাফল্য কোচ ও শিক্ষকদের সহযোগিতার জন্য হয়েছে। আমি তাদেরসহ গোপালপুরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আরো ভাল পরিসরে খেলে দেশের জন্য ভাল কিছু উপহার দিতে পারি সেজন্য সকলের দোয়া চাই। আমি চাই এই প্রতিকূলতা ভেদ করে এখান থেকে আরো নারী ফুটবল খেলোয়াড় বেড়িয়ে আসুক। যারা দেশেকে অনেক উপহার দিতে পারবে। পুজোতে আমি আমার মায়ের জন্য একটি বালা কিনে এনেছি। বাবার জন্য এনেছি পাঞ্জাবী ও পায়জামা। এছাড়াও আত্বীয়স্বজনের জন্য কিছু কাপড় এনেছি।
কৃষ্ণার মা নমিতা রানী সরকার বলেন, ফুটবল খেলার জন্য যারা মেয়েকে খারাপ বলত। আজ তারাই এসেছে সংবর্ধনা দিতে। আমি খুব খুশি ও আনন্দিত। আমি দেশবাসীর কাছে কৃষ্ণার জন্য আর্শীবাদ কামনা করি।
কৃষ্ণার বাবা বাসুদেব চন্দ্র সরকার বলেন, মেয়ের সাফল্যে খুব খুশি হয়েছি। এলাকার মানুষ ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে। কৃষ্ণা যেন দেশের জন্য আরো গৌরব বয়ে আনতে পারে সেই আশীর্বাদ চাই।
গোপালপুর সূতি ভিএম পাইলট স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক ও কৃষ্ণার কোচ গোলাম রায়হান বাপন বলেন, কৃষ্ণার সাফল্যের জন্য আমরা গর্বিত। দেশের জন্য আরো ভাল কিছু করবে এটাই প্রত্যাশা করি।