চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে মো. মুস্তাকিম নামের এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগে নগরের পাঁচলাইশ থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন মজুমদর ও সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিজ্ঞ আদালত।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) অতিরিক্ত চিফ চট্টগ্র্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার আদালত এই আদেশ দেন।
বাদীর আইনজীবী মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জিয়া হাবিব আহসান দৈনিক বায়ান্নকে বলেন, পুলিশ হেফাজতে কিডনি রোগীর স্বজন মোস্তাকিমকে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। সেখানে আবেদন খারিজ হলে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করা হয়।
মহানগর দায়রা জজ এটি শুনানির জন্য আবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠান। সেখানে শুনানি শেষে বাদীর নারাজি আবেদন গ্রহণ করে পিবিআইতে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২০২৩ সালের শুরুতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনরা আন্দোলনে নামেন। কয়েকদিন ধরে চলা এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ওই বছরের ১০ জানুয়ারি বিক্ষোভকারীরা চট্টগ্রাম মেডিকেলের প্রধান ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এদিন পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আন্দোলনকারীদের সড়ক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেন।
বাগবিতন্ডার একপর্যায়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি নিজের মুঠোফোন বের করে বিক্ষোভকারীদের ভিডিও ধারণ করেন এবং তাদের পরে দেখে নেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। এরপর একযোগে সবাই ওসির বিরুদ্ধে হইচই শুরু করেন এবং ভিডিও ডিলিট করার দাবি জানান।
একপর্যায়ে একজনকে ছেড়ে দিলেও মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর ওই দিন রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় মোস্তাকিমকে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়। এতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা ও কর্তব্য কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মোস্তাকিমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরে জামিনে মুক্ত হয়ে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে পিটিশন মামলা করেন মোস্তাকিম। বিজ্ঞ আদালত পিটিশনটিকে নিয়মিত মামলা হিসেবে পাঁচলাইশ থানায় রেকর্ডের আদেশ দেন। একইসঙ্গে মামলাটি এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা দিয়ে সিআইডিকে তদন্তের আদেশ দেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মোস্তাকিম তার মাকে ৭ বছর ধরে ডায়ালাইসিস করান। সম্প্রতি ডায়ালাইসিস মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তিনিসহ রোগীর স্বজনরা মিলে আন্দোলন করেন। ঘটনার দিন ১০ জানুয়ারি তারা চমেক হাসপাতালের প্রধান গেটে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেন।
এসময় পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে এসে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে ওসি নাজিম মোস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিচে মারধর করেন এরপর তাকে থানায় নিয়ে পুনরায় মারধর করেন।
মারধরের সময় এসআই আবদুল আজিজ মোস্তাকিমকে বলেন ‘ওসি নাজিম স্যারের সাথে আর বেয়াদবি করবি?’। এসময় ওসি নাজিম বলে ‘... রিমান্ডে এনে থানায় পেটাতে হবে, তারপর বুঝবি পুলিশ কি জিনিস?’। এরপর থানায় মারধরের বিষয়টি ফাঁস করলে মোস্তাকিমকে ক্রসফায়ার দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ