চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৪১ টি ওর্য়াডের মধ্যে ৮নং শুলকবহর ওর্য়াড নগরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত। প্রায় ২ লক্ষ মানুষের বসবাস এই ওয়ার্ডে। শুলকবহর ওয়ার্ডে জনসাধারণের মুখে মুখে জলাবদ্ধতায় প্রচলিত হয়ে গেছে ব্যাঙে মুতলে ডুবে যায় মুরাদপুর। অল্প বৃষ্টিতেই নগরের বেশ কিছু সড়ক ও নিচু এলাকাসমূহ হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত ডুবে যায়। এর মধ্যে ৮ নং ওয়ার্ডের জনগণ ছিল বেশী ভুক্তভোগী।
এই ওয়ার্ডটি বিচ্ছিন্ন ও পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ড হিসেবে গন্য করা হতো। একসময়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন, আর্বজনাময়, জননিরাপত্তাহীন একটি ওয়ার্ড একটু রাত হলেই ঘনিয়ে আসতো অন্ধকার, স্ট্রিট লাইটগুলো জ্বলত মিট মিট করে। সন্ধ্যা হলে শুলকবহর ওর্য়াডে বিভিন্ন এলাকায় নেমে আসা নীরবতার কারণে বেড়ে যেত ছিনতাই আর নেশাখোরদের আনাগোনা। ওয়ার্ড জুড়ে ভঙ্গুর রাস্তা ঘাট, ফুটপাতে ময়লা আবর্জনা অপরিকল্পিত ডাস্টবিনের দুর্গন্ধে, ফুলে ফেঁপে উঠা নর্দমা, রাস্তায় পানি জমে থাকা ছিলো ৮ নং ওয়ার্ডের পূর্ব চিত্র।
মোরশেদ আলম কাউন্সিলর হওয়ার পর শুরুতেই জনভোগান্তির বিষয়গুলোতে নজর দিলেন। রাস্তাঘাট নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও আলোকায়ন ছাড়াও ওয়ার্ড অফিসের অনেক অনিয়ম দূরীকরণ, ওয়ার্ডে অফিসের কাজে গতিবৃদ্ধি, এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন, খেলাধুলার প্রসার ও জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ছাত্র জীবনে রাজনীতিতে আসার পর মানবসেবাকে আমি প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেছি। কাউন্সিলর হওয়ার আগে থেকেই এই ওয়ার্ডের সকল শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে আমার ছিল মেলবন্ধন। মানবসেবাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। তাই কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকেই আমি আমার ওয়ার্ড এলাকার উন্নয়ন নিয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি। প্রধান সমস্যা হিসাবে ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতাকে চিহিৃত করেছি। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সমন্বয়ে চারটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি এবং প্রকল্প গুলো কাজ প্রায় শেষের দিকে প্রকল্প গুলো বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম নগরের মানুষ জলবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে আশা করি। আমি সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে স্বচ্ছ কাউন্সিলর হিসেবে খ্যাতি পেয়েছি।
আমার প্রতিশ্রুত কর্মকান্ডে এলাকাবাসীর মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছি । সাধারণত সিটি করপোরেশনের তিন মৌলিক কাজ রাস্তা, পর্যাপ্ত ফুট ওভারব্রিজ, প্রতিটি রাস্তায় আলোকায়ন, পর্যাপ্ত ফুটপাত, রাস্তার পাশ জুড়ে লাগিয়েছি গাছ, উন্নত ড্রেনেজ বাবস্থা ও অপরিকল্পিত ডাস্টবিন গুলো অপসারণ করে নান্দনিক সাজে সাজিয়ে যাচ্ছি শুলকবহর ওর্য়াড। বর্তমানে নগরে একটি আদর্শ ওয়ার্ডে রূপান্তরিত হয়েছে ৮নং শুলক বহর ওর্য়াড।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৪১ টি ওর্য়াডের মধ্যে প্রথম বাসা বাড়ি থেকে পচনশীল বর্জ্য ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদাভাবে সংরক্ষণ ব্যাবস্থা চালু করেছি। করোনা মহামারী পরিস্থিতিতেও ছিলাম সক্রিয়। করোনাকালীন দুর্যোগ মোকাবেলায় ওয়ার্ডের আপাময় জনসাধারণের পাশে থেকে সাধ্যমতো ত্রাণ বিতরণ করেছি। এর বাইরেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) থেকে মেয়র প্রদত্ত ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণও বিলি করেছি। প্রতি রমজানে দুঃস্থ ও অসহায় রোজাদারদের মাঝে ইফতার ও সেহরি সামগ্রী বিতরণ করছি প্রতিবছর । সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য ব্যক্তি উদ্যেগে তৈরি করেছি একটি স্কুল "বিজয় বিদ্যানিকেতন"। নান্দনিক হেলদি ও গ্রীন ওয়ার্ড হিসেবে এই ওয়ার্ড স্বীকৃতি পেয়েছে। মুরাদপুর -বহদ্দারহাট রোডের কাজ বর্ষার মৌসুমের জন্য বন্ধ থাকার কারনে জনসাধারণ ভোগান্তির স্বীকার হয়েছেন। তবে শীত মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে সড়ক উন্নয়ন কাজ ইতিমধ্যে ব্যাগমান রয়েছে এবং শীঘ্রই মুরাদপুর -বহদ্দারহাট রোডের কাজ সম্পূর্ণ হবে। এই ওয়ার্ডের জনগণ আরো সুযোগসুবিধা ভোগ করবে।
কাউন্সিলর মোঃ মোরশেদ আলম জানান, ওর্য়াডের জনসাধারণকে সুন্দর ও দুর্গন্ধহীন পরিবেশ বজায় রাখতে পুরো ওর্য়াডে যতগুলো ডাস্টবিন আছে যেমন আপন নিবাস, ২নম্বর গেইট, বাদুড় তলা সবগুলো ডাস্টবিন অপসারণ করে একটি ডাস্টবিন স্টেশনে নিয়ে আসবো। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। আগামী ২-৩ মাসের মধ্যেই এই প্রকল্প শেষ হবে। নগরকে ক্লীন ও গ্রীন করার লক্ষ্যে তিনি নিয়মিত কাজ করায় সম্প্রতি জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান "জাইকা “মডেল কাউন্সিলর” হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন।
এই স্বীকৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, এলাকার আপাময় জনসাধরণের সাথে আমার নির্বাচিত হওয়ার আগ থেকে একটি প্রাণের সম্পর্ক রয়েছে। যখনই সময় ও সুযোগ পেয়েছি দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এলাকাবাসীকে সহায়তা দিয়েছি। পক্ষান্তরে, আমি যতটুকু এলাকাবাসীর প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি সহানুভূতি দেখিয়েছে আমার শুলকবহর ওয়ার্ডের জনসাধারণ। জনতার অনুরোধেই জনতার কাতার থেকে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হয়েছিলাম। জনতাই আমাকে তাঁদের মূল্যবান ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন। জনতার অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে কর্পোরেশনের নীতিমালা অনুযায়ী করে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাদের হয়ে কাজ করতে গিয়ে এমন অর্জন আমাকে আনন্দিত করেছে। আমার প্রতিটি কাজে জনসাধারণকে পাশে পেয়েছি তাদের সহযোগীতা ছাড়া এতদূর আসা সম্ভব হতো না তাই তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এবং বরাবরের মতোই তাদের থেকে দোয়া ও সাহায্য সহযোগিতা কামনা করছি।