ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শিবচরে এসএসসিতে জমজ ভাই বোনের চমক

জন্মেছে একসাথে গোল্ডেন এ প্লাসও পেল একসাথে

ওয়াহিদ মুরাদ শিবচর(মাদারীপুর)প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২ অগাস্ট ২০২৩ ০৮:২৩:০০ অপরাহ্ন | শিক্ষা

চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় জমজ দুই ভাই বোন গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা জমজ ভাই বোন সাদিয়া ও জিহাদের এমন সাফল্যে মা, বাবা, শিক্ষকবৃন্দসহ প্রতিবেশীরাও খুশি। মাদারীপুরের শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনষ্টিটিউশনের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস অর্জনকারী সাদিয়া হতে চায় ডাক্তার আর জিহাদ হতে চায় ইঞ্জিনিয়ার। তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে দুই সন্তানের স্বপ্ন পূরনের চিন্তার ভাঁজ মা বাবার কপালে।

 

জানা যায়, শিবচরের ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ক্রোকচর নতুন বাজার গ্রামের কৃষক শওকত আলী চোকদার ও সাথী আক্তারের ৩ মেয়ে ও ১ ছেলের মধ্যে বড় মেয়ে সাদিয়া ও ছেলে জিহাদ জমজ। মাত্র ৩ মিনিটের বড় সাদিয়া। সাদিয়া আর জিহাদ ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী। তাদের বাবা শওকত আলী এক সময় সৌদি আরব পাড়ি জমালেও গত প্রায় ৫ বছর যাবত দেশেই রয়েছেন। বিদেশে থাকা অবস্থায় শিবচর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বসুন্ধরা এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করে স্ত্রী ও ৪ সন্তানকে নিয়ে এখানেই বসবাস করছেন। মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দা আর সেই সাথে নতুন করে বিদেশে যাওয়ার অর্থ সংকট থাকায় আর পাড়ি দেয়া হয়নি বিদেশে। দেশেই নিজের জমিতে কৃষি কাজ করে পরিবার নিয়ে কোনমতে চলছেন। শওকত আলী জমজ দুই সন্তান সাদিয়া ও জিহাদকে শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউশনে  ষষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি করেন। দুই ভাই বোনের লেখাপড়া মুগ্ধ করেন শিক্ষদেরও। চলতি বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে সাদিয়া ও জিহাদ। পরীক্ষায় দুজনই গোল্ডেন এ প্লাস অর্জন করেছে। এমন ফলাফলে ভাই বোন পরিবারসহ অনেক খুশি। সাদিয়ার স্বপ্ন ভাল কলেজে লেখাপড়া শেষ করে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবে। আর জিহাদের স্বপ্ন প্রকৌশলী হবে। সন্তানদের এমন সাফল্যে মা বাবা আনন্দিত হলেও চিন্তার ভাঁজ তাদের কপালে। প্রিয় সন্তানদের স্বপ্ন পূরনে কতটুকু করতে পারবেন তারা। সন্তানদের স্বপ্নের সিঁড়িতে পৌছাতে যে পরিমান অর্থের প্রয়োজন সেই পরিমান অর্থের জোগানইবা দেবেন কিভাবে। তবুও জমজ দুই সন্তানের স্বপ্ন পূরনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ পিতা মাতা।

 

জিহাদ বলেন, আমার বাবা এখন কৃষি কাজ করেই আমাদের এসএসসি পাস করিয়েছেন। স্কুলের স্যারেরা যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। তাইতো আজ ভাল ফলাফল অর্জন করতে পেরেছি। আমার স্বপ্ন আমি ইঞ্জিনিয়ার হবো। তাই ভাল একটি কলেজে ভর্তি হতে চাই। জানি না পারবো কিনা।

 

সাদিয়া আক্তার বলেন, আমরা জমজ দুই ভাই বোন। ছোট বেলা থেকেই আমাদের ভরন পোষন, স্কুলে পৌছে দেয়া, সময়মত টিফিন পৌছে দেয়াসহ অনেক কষ্ট করেছেন আমার মা। আগে বাবা বিদেশ থাকলেও এখন নিজেদের জমিতে কৃষি কাজ করেই আমাদের ছয় জনের সংসার পরিচালনা করেন। আমার ইচ্ছা একজন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার। কিন্তু দুই ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ কিভাবে হবে বুঝতে পারছি না।

 

মা সাথী আক্তার বলেন, সাদিয়া আর জিহাদ আমার প্রথম সন্তান। জমজ হওয়ার কারনে ওদের বড় করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তবে ছোট বেলা থেকেই ওরা লেখাপড়ায় মনোযোগী। পিএসসিতেও বৃত্তি পেয়েছিল। এখন ওরা গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে এতে আমরা অনেক গর্ববোধ করছি। স্কুলের স্যারেরা সব সময় ওদের খোঁজ খবর নিতো। সাদিয়ার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার আর জিহাদের স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হবে। দুজনের স্বপ্ন পূরনে প্রতি বছর যে পরিমান টাকার প্রয়োজন হবে তা জোগান দেয়ার কথা চিন্তা করলেই হতাশ হয়ে যাই। তবে যত কষ্টই হোক সকলের সহযোগিতা পেলে আমি আমার সন্তানদের স্বপ্ন পূরন করবো।

 

শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনষ্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মো: হারুন-অর-রশিদ বলেন, সাদিয়া আর জিহাদ খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী। ওদের বাবা এক সময় বিদেশে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে দেশেই কৃষি কাজ করে সংসার পরিচালনা করছেন। ওদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল না। দুই ভাই বোনের লেখাপড়া একসাথে চালানো ওদের পরিবারের জন্য খুবই কষ্টকর। ওদের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।