জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির আয়োজনে গতকাল রোববার রাতভর অনুষ্ঠিত হওয়া কনসার্টে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় জুনিয়রদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে সিনিয়র ব্যাচের একদল শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বিজয় কুমার দত্ত, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন অব্রতো, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান নাজিজ'সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগীরা হলেন- মো. ফরহাদ হোসেন বিপুল, মাহিম খান, মহিউদ্দিন আহমেদ সৌরভ ও মো. ইব্রাহিম খলিল সাব্বির। তারা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীরা জানান, গতকাল রোববার রাতে মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির আয়োজিত কনসার্টে আমাদের ৫২তম ব্যাচের তিনজন শিক্ষার্থী রাত আনুমানিক ১২টায় উপস্থিত হয়। ঐ অনুষ্ঠানে অভিযুক্তরা’সহ তাদের কিছু বন্ধু নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ভুক্তভোগীদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করে এবং জানতে চায় তারা বহিরাগত কি না। পরে তাদের যথাযথ পরিচয় স্পষ্ট করার পরেও অভিযুক্তরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পেশিশক্তি প্রদর্শনসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
এতে আরও বলা হয়েছে, প্রথমে ভুক্তভোগীদের এক সহপাঠী মো. ফরহাদ হোসেন বিপুলকে তার পরিচয় বলতে বলা হয়। পরিচয় দিলেও তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অভিযুক্তরা। এদিকে আমাদের আরেক সহপাঠী মাহিম খানও তাদের অযাচিত অশোভন আচরণের শিকার হয়। ‘এই তুই ক্যাম্পাসের কিনা’ জিজ্ঞেস করেই আকস্মিকভাবে গায়ে হাত তোলে সিনিয়ররা। ফলে মাহিমের চশমা ভেঙ্গে যায়।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, অভিযুক্তদের হাত থেকে রেহাই পায়নি ভুক্তভোগীদের অন্য বন্ধু মো. মহিউদ্দিন আহমেদ সৌরভ। ১৫-২০ জন সিনিয়র শিক্ষার্থী তাকে মাটিতে ফেলে মারধর করে। এসময় অভিযুক্তরা সৌরভকে তিন দফায় মারধর করে। প্রথমে সেন্ট্রাল ফিল্ডে, পরে সেখান থেকে প্রাণ বাঁচাতে সে রাস্তার দিকে দৌড় দিলে রাস্তায় ফেলে এবং শেষে ক্যাফে অপরাহ্ণের সামনে তাকে মারা হয়। এসময় তার চশমা ও মানিব্যাগ’সহ প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা হারানো যায়। ঘটনাস্থলে সৌরভকে বাঁচাতে মো. ইব্রাহিম খলিল সাব্বির গেলে তাকেও মারধর করা হয় এবং গুরুতর আহত হয়।
অভিযুক্ত লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বিজয় কুমার দত্ত বলেন, প্রথমে জুনিয়ররা আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এ জন্য তাদের সাথে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে মারধর কিংবা পায়ের নিচে চাপা দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
আরেক অভিযুক্ত সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন অব্রতো বলেন, তারা কেন আমার নামে এ ধরনের অভিযোগ দিয়েছে এটা বলতে পারছি না। তবে আমি কখনোই তাদের উপর হামলা করিনি।
অন্য অভিযুক্ত পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের ইমরান নাজিজ বলেন, আমি কনসার্ট দেখছিলাম। হঠাৎ জানতে পারলাম ৫১তম ব্যাচের সাথে একটা ঝামেলা হয়েছে এবং প্রক্টোরিয়াল টিম এসেছে। তখন আমি ওই জায়গায় গিয়েছিলাম। এছাড়া এ ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক অসীম চন্দ্র রায় বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হই। সেখানে গিয়ে দেখি মহিউদ্দিন আহমেদ সৌরভকে খুব বাজেভাবে পেটানো হয়েছে। আমরা অভিযুক্তদের মধ্য থেকে একজনকে তখনই শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। সেই শিক্ষার্থীর নাম বিজয় কুমার দত্ত। বাকিদের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে