ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯শে কার্তিক ১৪৩১

জাবির প্রশাসনিক পদে রদবদল, আন্দোলনকারীদের 'রাজাকার' বলায় অধ্যাপক বরখাস্ত

আকিব সুলতান অর্নব, জাবি প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১২ নভেম্বর ২০২৪ ১১:১২:০০ পূর্বাহ্ন | শিক্ষা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলার মদদদাতার অভিযোগে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বসির আহমেদকে ডিন পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলমকে নতুন ডিনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (১০ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিষয়টি সোমবার রাতে নিশ্চিত করেছেন সিন্ডিকেটের সদস্যসচিব ও রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান।

ফরিদ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর গত ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ-বহিরাগত সন্ত্রাসী ও পুলিশ হামলা করে। এ ঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই উপাচার্য, প্রক্টরসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাসহ মোট ২১৪ জনকে আসামি করা হয়। অধ্যাপক ফরিদকে ৮ নম্বর আসামি করা হয়। ৪ অক্টোবর তাঁকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে আটক করে পুলিশে দেন একদল শিক্ষার্থী। পরদিন সাজ্জাদুলের করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

একই মামলার ৪ নম্বর আসামি করা হয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন বসির আহমেদকে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরেননি। তাঁকে ডিন পদ থেকে অব্যাহতির দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে গতকাল সিন্ডিকেট সভায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

ফরিদ আহমেদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রুবিনা জাহান তিথি বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ঘটে যাওয়া ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলার অন্যতম মদদদাতা ছিলেন ফরিদ। এসব অভিযোগে ১৮ আগস্ট ফরিদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন তাঁর নিজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এ ছাড়া আন্দোলন চলাকালে ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের একটি চ্যাটবক্স ফাঁস হয়। চ্যাটবক্স বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জেবুন্নেসার লেখা, ‘আমাদের এতগুলো শিক্ষক আহত হয়েছেন। আমরা না খেয়ে আছি। আমাদের খবর কাউকে নিতে দেখিনি।’ এই মেসেজের প্রত্যুত্তরে অধ্যাপক ফরিদ শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আরেকটু অপেক্ষা করুন। রাজাকারদের পরাজয় সমাসন্ন। আপনাদের কষ্টের বিনিময়ে দেশ আগামী দিনে শুদ্ধ ধারায় এগিয়ে যাবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

এ বিষয়ে প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে অধ্যাপক বশির আহমেদ অনুষদের কোনো অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অংশ নেননি। এ কারণে অনুষদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সিন্ডিকেটের পরামর্শে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ৮ (২) ধারা অনুসারে অধ্যাপক শামসুল আলমকে ডিনের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই রাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অধ্যাপক বশির আহমেদের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ তুলেছিল শিক্ষার্থীরা। এর পর ৫ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থীরা ডিনের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনসহ একাধিক প্ল্যাটফর্মে তার অপসারণের দাবি জানানো হয়।

 

বায়ান্ন/এসএ