পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত না মানায় সমাজচ্যুত করে গ্রামছাড়া করা হয়েছে ৯ পরিবারকে। ১০ মাস ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে এই নয় পরিবারের অর্ধশতাধিক সদস্যের। বাড়ি ফেরার আকুতি জানিয়ে সুনামগঞ্জে মানববন্ধন করেছেন সমাজচ্যুত এই ৯ পরিবারের লোকজন।
রবিবার শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে জীবনের নিরাপত্তা ও আইনী সহযোগিতা প্রার্থনা করেন তারা। মানবন্ধনে তারা বলেন, নিজের ক্রয়কৃত জমির ভাগ না দেয়ায় গ্রাম্য মাতব্বরদের নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে ভয় আর আতংকে ১০ মাস ধরে বাড়ি ফিরতে পারছেন না সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের সমাজচ্যুত ৯ পরিবারের সদস্য। গ্রাম্য মাতব্বরদের হুমকিধামকিতে বিভিন্ন গ্রামে যাযাবরের মতো মানবেতর জীবনযাপন করছেন পরিবারের নারী পুরুষ ও শিশু সন্তানরা।
নির্যাতিত পরিবারের লোকেরা অভিযোগ করে জানান, লোকশূন্য বাড়ি ঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনী সহযোগিতা চেয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না তাদের। পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি ফিরতে চান নির্যাতিত পরিবারগুলো।
নির্যাতিত পরিবারের পক্ষে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন রামচন্দ্র তালুকদার, জয়চান, আসু চন্দ্র তালুকদার.সমিত্রা রাণী, মিতালী তালুকাদর ও চম্পা রাণী প্রমুখ।
সমাজচ্যুত রামচন্দ্র তালুকাদার মানববন্ধনে বলেন, নিজের ক্রয়কৃত জমিতে ভাগ না দেয়ায় পঞ্চায়েত কর্তৃক সমাজচ্যুত করে গ্রামছাড়া করেছে আমাদের। ইউপি সদস্য সুজন হাওলাদার, গুরুদাস তালুকদার, গোপী তালুকদার, চিতু বিশ্বাস, কৃষ্ণ বিশ্বাস, নিরঞ্জন সরকারম, পান্ডব সরকার গংরা এই পঞ্চায়েতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের লোকজন্য লোকশূন্য বাড়িতে লটুপাট ও ভাঙচুর করেছে। বাড়ি ফিরতে চাইলে তারা মোবাইল ফোনে হুমকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমরা এখন আমাদের জীবনের নিরাপত্তা চাই। ছেলে মেয়ে নিয়ে বাড়িতে ফিরতে চাই। লুট হওয়া সম্পদ ফেরত চাই। সরকার আমাদের সাহায্য না করলে আমরা কোথায় যাবো?
প্রসঙ্গত, চানপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়া নিবাসী ভরত চন্দ্র তালুকদারের নামে পশ্চিম চানপুর মৌজার ৪৯ নং জেএল সংক্রান্ত ১৮৪ খতিয়ানের ৮২ নং দাগের ১ একর ২ শতক জমি, একই খতিয়ানের ৩৫৯ নং দাগের ২ একর জমি, ৩৮১ নং দাগের ৭ একর ৫৩ শতক সহ মোট ১০ একর জমি রয়েছে। এই জমি তিনি অন্যের কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। জমি কিনতে গ্রামের মাতব্বরদের আপত্তি ছিল। জমি কেনার পর মাতব্বরদের দাবির প্রেক্ষিতে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রামবাসীকে কিছু জমি দান করেন ভরত চন্দ্র তালুকদার। জমি দানের পরও মাতব্বরদের দাবি পূরণ হয়নি। বছরখানেক আগে শুরু হয় ভরত চন্দ্র তালুকদার ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র। একে একে ৯ পরিববারকে করা হয় সমাজচ্যুত। এদের মধ্যে ভরত চন্দ্র তালুকদার, রাম চন্দ্র তালুকদার, লক্ষণ চন্দ্র তালুকদার, জয় চরণ তালুকদার, জয় চান তালুকদার, আশু তালুকদার, হরে কৃষ্ণ তালুকদার, পলিন্দ্র তালুকদার, বিরেন্দ্র তালুকদার এরা কেউ পেশায় কৃষক, কেউ দিনমজুর, আবার কেউ চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বর্তমানে সদর উপজেলা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিভিন্ন আত্মীয়দের বাড়িতে অবস্থান করছেন এসব পরিবার।