ঢাকা, বুধবার ১ মে ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাইদহে লাইট পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ, তিনগুন ফলন বৃদ্ধি

এম বুরহান উদ্দীন, ঝিনাইদহ: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৪৫:০০ অপরাহ্ন | কৃষি ও প্রকৃতি

দূর থেকে মনে হবে মাঠজুড়ে যেন মিটিমিটি জ্বলছে জোনাকি। কাছে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লাইট আর নিচে সবুজ ড্রাগন গাছ ও সাদা ফুলের হাতছানি। যেন আঁধার রাতে আলো আর সবুজ-সাদার মিলনমেলা। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চারাতলা গ্রামের একটি ড্রাগন বাগানে দৃশ্যটি চোখে পড়ে। বাড়তি ফলনের আশায় এমন পরিবেশ তৈরি করেছেন বিপ্লব জাহান। এদিকে বাগানের সৌন্দর্য দেখতে রাতে ভিড় করছেন অনেকেই।

জানা গেছে, প্রায় ৩ বছর আগে উপজেলার চারাতলা গ্রামে ১১ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হয় ড্রাগন বাগান। এখানে ৩০ হাজার গাছে প্রতি সিজনে ফলন হতো গড়ে ৪৫ টন। বাগানটিতে মাসে খরচ ২ লাখ টাকা। প্রতিদিন ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করেন। দেড় মাস আগে চীন থেকে ২ হাজার ৮০০ বিশেষ ধরনের লাইট এনে রাতে শুরু হয়েছে ড্রাগন ফলের পরিচর্যা। আলোর কারণে বাগানে ফুলের সংখ্যা গত মৌসুমের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এখন প্রায় ৭০ হাজার ফুল ফুটেছে। যা অন্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।

দর্শনার্থী মেহেদী হাসান জানান, ড্রাগন বাগানে আসার পর দেখে অনেক ভালো লাগলো। বাংলাদেশের এই অঞ্চলে এটাই প্রথম বাগান। অনেক অত্যাধুনিক চাষ। এই বাগানকে ঘিরে এই জায়গা আরও উন্নত হবে বলে মনে করেন তিনি।

দর্শনার্থী আহমেদ নুহায়েদ আনসারী তাজ জানান, এমন সৌন্দর্য সত্যিই আগে দেখিনি। বন্ধুদের থেকে শোনার পর এসেছি, দেখে অভিভূত।

বাগানের কর্মচারী মনিরুর ইসলাম বলেন, যে সময় ড্রাগনের কোনো চাষ থাকে না সেই অসময়ে এমন উৎপাদন সত্যিই অভিনব ঘটনা। এর আগে কখনো এমন বাগানে কাজ করিনি। এই বাগানে নিয়মিত ১৫ জন কাজ করে। রাতে একজন নাইট গার্ড বাগান পাহারা দেয়। যখন ফুল ফোটে তখন রাতেও ফুলগুলোতে কৃত্রিম পরাগায়নের কাজ করতে হয়।

ঝিনাইদহ হরিণাকুণ্ড চারাতলা ড্রাগণ ফ্রুটস এন্ড এগ্রোর প্রোপাইটার বিপ্লব জাহান জানান, ইউটিউব দেখে মূলত এ পদ্ধতির খবর জেনেছি । তারপর শুরু করে ব্যাপক ফলন পাচ্ছি । প্রাথমিকভাবে বড় অংকের টাকা লাগলেও লাভও ৩ গুণ। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা ও রাত ৩টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মোট ৯ঘণ্টায় দুইদফা লাইটগুলো জ্বলে। শীতকালে দিন ছোট হয় তাই দিনের আলো কম হয় । ড্রাগন বেড়ে ওঠে মূলত দিনের আলোয়, তাই এ পদ্ধতিতে চাষ করলে রাতেও ড্রাগনের বেড়ে ওঠা স্বাভাবিক থাকে।

তিনি আরো জানান, বিপ্লবের এই বাগানে ৩৩ হাজার ড্রাগনের গাছ রয়েছে। যা থেকে তিনি গতবছর বিক্রি করেছেন ৩০ লাখ টাকার ড্রাগন। দেশের কোথাও এখন ড্রাগন ফলের উৎপাদন না থাকলেও তার বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে ড্রাগন ফল । যা নিয়মিত ৩৫০টাকা কেজি দরে বিক্রিও হচ্ছে। এ বছর ৫০ হাজার মেট্রিকটন ড্রাগন উৎপাদন হবে বলে তিনি জানান ।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, এক বছরের ব্যবধানে ঝিনাইদহে ব্যাপকভাবে ড্রাগন চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকেরা নতুন নতুন প্রযুক্তিতে এই চাষ করছে। ঝিনাইদহে প্রথম লাইট জ্বালিয়ে কৃত্রিমভাবে দিবাদৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে। এটা নতুন প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিতে চাষ করা অনেক ব্যয়বহুল। এই চাষ যে কেউ করতে পারবে না। বিপ্লব চীন থেকে অধ্যাধুনিক এই লাইট অনেক টাকা ব্যয় করে নিয়ে এসেছেন। তবে তাদের দেখা দেখি যদি এই প্রদ্ধতিতে কেউ চাষ করতে চাইলে অল্প পরিসরে পরীক্ষামূলক ভাবে করতে পারে। যদি তারা লাভবান হয়, তাহলে পরে বেশি পরিসরে এই পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করতে পারে।