ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অর্থ ফেরত দিতে শেখ ফজলে নূর তাপসের মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। তাপস, যিনি ডিএসসিসির সাবেক মেয়র, তার মেয়াদকালে করপোরেশনের বিপুল পরিমাণ অর্থ এ ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তাপসের নির্দেশেই এসব অর্থ তার নিজ মালিকানাধীন ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছিল এবং বর্তমানে এ অর্থ ফেরত দিতে ব্যাংকটি গড়িমসি করছে।
ডিএসসিসির হিসাব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তাপস মেয়র থাকাকালে করপোরেশনের বার্ষিক রাজস্বের প্রায় অর্ধেক অর্থ মধুমতি ব্যাংকে রাখা হতো। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে করপোরেশনের মোট জমা অর্থের ৪৬ শতাংশ অর্থাৎ ৫৪৩ কোটি টাকা এ ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা হয়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পের আরও ৪২৩ কোটি টাকা ব্যাংকটিতে জমা রাখা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মধুমতি ব্যাংকের গড়িমসির কারণে করপোরেশনের উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঠিকাদারদের বিল এবং জামানতের অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, "মধুমতি ব্যাংক নানা অজুহাতে অর্থ ফেরত দিতে সময়ক্ষেপণ করছে। আমরা এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করলেও তারা আশ্বাস ছাড়া কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রয়োজনে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।"
চলতি জানুয়ারি পর্যন্ত মধুমতি ব্যাংকে ডিএসসিসির স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ছিল ৩২৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৪৫ কোটি টাকা ঠিকাদারদের জামানতের এবং বাকি ১৭৮ কোটি টাকা বাজার সালামী ও অন্যান্য খাতের। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে করপোরেশন ১৪৪ কোটি টাকা ফেরত চেয়ে মধুমতি ব্যাংকে চিঠি দেয়। এরপর ব্যাংকটি ৫ দফায় ১৩৬ কোটি টাকা ফেরত দেয়, কিন্তু এখনও ৮ কোটি টাকা বাকি রয়েছে।
তাপসের মেয়াদকালে মধুমতি ব্যাংক এবং ডিএসসিসির মধ্যে গড়ে ওঠা অস্বচ্ছ লেনদেনের বিষয়ে কর্মকর্তারা জানান, তাপস পরিকল্পিতভাবে করপোরেশনের আর্থিক কার্যক্রম তার ব্যক্তিগত ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত করেন। মধুমতি ব্যাংককে সুবিধা দিতে রাজধানী ও কেরানীগঞ্জে ব্যাংকটির ১০টি শাখায় করপোরেশনের অর্থ জমা রাখা হয় এবং নগর ভবনসহ বিভিন্ন অফিসে মধুমতির বুথ স্থাপন করা হয়।
মধুমতি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল হাসান খান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ধাপে ধাপে অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।"
তাপসের ব্যাংকের এমন আচরণ দেশের আর্থিক খাতের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে। ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, "মধুমতি ব্যাংকের গড়িমসি প্রমাণ করে দেশের ব্যাংকিং খাত সংকটে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।" তিনি আরও বলেন, "করপোরেশনের মতো বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত ফেরত দিতে গড়িমসি করা একটি গুরুতর সমস্যা।"
উল্লেখ্য, শেখ ফজলে নূর তাপস, যিনি মধুমতি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান পরিচালক, তার সময়কালে ব্যাংকটির মাধ্যমে ডিএসসিসির রাজস্ব এবং উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ পরিচালিত হয়েছিল। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব অর্থ ফেরত আনতে করপোরেশন নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
বায়ান্ন/এএস/একে