ঢাকা, বুধবার ২২ মে ২০২৪, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় সর্বোচ্চ, কম জলবিদ্যুতে

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৮ জুলাই ২০২২ ০৭:৩০:০০ অপরাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

 

বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫২টি। উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১০টি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২৯০ মেগাওয়াট, যা মোট উৎপাদনের ৬ শতাংশ। তবে ডিজেলচালিত কেন্দ্রগুলোয় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ২২ টাকা। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিক। এর প্রভাবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয়ও বাড়ছে।

অন্যদিকে বর্তমানে গড়ে প্রতি ইউনিট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ১৫ পয়সা। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি) বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ১০ টাকা। বড়পুকুরিয়ার কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ৪ টাকা। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ আমদানিতে ব্যয় ৬ টাকা, সোলারে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ১২ টাকা। ফার্নেস অয়েলে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ১২ টাকা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে সোমবার (১৮ জুলাই) এ তথ্য জানা গেছে।

পিডিবি তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ (আমদানিসহ) ছিল সাত হাজার ৮৫২ কোটি ৫৬ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে মোট ব্যয় হয়েছে ৪৯ হাজার ২৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় ৬ টাকা ২৭ পয়সা। এর মধ্যে সবচেয়ে কম ব্যয় হয় হাইড্রো তথা জলবিদ্যুতে। সবচেয়ে বেশি ব্যয় ছিল ডিজেলে ৫৩ টাকা।

এ অর্থবছরে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ছিল এক হাজার ২৯০ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ৬০ কোটি ৭২ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় তিন হাজার ২২৯ কোটি সাত লাখ টাকা। ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ৫৩ টাকা ১৮ পয়সা। ২০২০-২১ অর্থবছর হাইড্রো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ৬৫ কোটি ৫০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় ১৮২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ফলে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় পড়ে মাত্র দুই টাকা ৭৯ পয়সা।

পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কাছে সর্বশেষ যে চিত্র আছে— তাতে দেখা গেছে ডিজেল পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় সব থেকে বেশি, ডিজেল পুড়িয়ে এক ইউনিট বিদ্যুৎ পেতে খরচ হয় ২২ টাকা। অন্যদিকে সব থেকে কম খরচ পড়ে জলবিদ্যুতে মাত্র ১৫ পয়সা।

দেশে ডিজেলের চাহিদা ৪৬ লাখ মেট্রিক টন

দেশে বর্তমানে ডিজেলের চাহিদা ৪৬ লাখ মেট্রিক টন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বৈশ্বিক বাজারে বর্তমানে প্রতি ব্যারেলে ডিজেলের মূল্য ১৪১ ডলার। প্রতি ডলার সমান ৯০ টাকা হলে এক ব্যারেলের দাম পড়ে ১২ হাজার ৬৯০ টাকা। এক ব্যারেলে ডিজেল ধারণক্ষমতা ১৫৯ লিটার। ফলে এক লিটারের দাম পড়ে প্রায় ৮০ টাকা। বছরে ডিজেলের চাহিদা ৪৬ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে ১০টি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেলের চাহিদা ২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে দেশে প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনকে কমিয়ে যাতে খরচ কম হয় সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যাতে আমরা সহনশীল হতে পারি সেই পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। ডিজেল পুড়িয়ে আপাতত বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করেছি। এতে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। মনে রাখতে হবে, ডিজেলের দাম বর্তমানে আকাশচুম্বি। ডিজেল ছাড়া আমাদের অন্যান্য যে বিদ্যুতের ব্যয় আছে তা কমিয়ে আনতে হবে ।