১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজ উদ্দিন আহমদ। রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজ খবর নিতে তিনি সীমান্ত এলাকার প্রতিটি ক্যাম্পে ছুটে গেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে আশার বাণী শুনিয়েছেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ চলাকালীন জুলাই মাসে তিনি গিয়েছিলেন লোয়ারবন ক্যাম্পে। এই ক্যাম্পটির অবস্থান ছিল ভারতের আসাম প্রদেশের শিলচর জেলায়। সেখানে সমবেত হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাজ উদ্দিন আহমদ ওই সফর নিয়ে দৈনিক বায়ান্নের কাছে স্মৃতিচারণ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আজিজুর রহমান। তিনি ছিলেন এক নম্বর কোম্পানির কমান্ডার।
তিনি জানান, জুলাই মাসে লোয়ারবন ট্রেনিং কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ চলছিল। একদিন রাতে একজন মেজর এলেন। মেজর আসার পূর্ব মূহুর্তে বিশেষ ধরণের বাঁিশ বাজানো হয়। ওই বাশিঁর আওয়াজে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রæত সমবেত হলেন। কিছুক্ষণ পর মেজর সাহেব এলেন। সমবেত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বললেন পরদিন সকাল ১০ টায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদ আসবেন। ওই খবরে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উচ্ছ¡াস ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পাবেন। কথা বলতে পারবেন। জানতে পারবেন প্রিয় দেশ শত্রæমুক্ত হতে; আর কতদিন লাগবে?
সরদার আজিজুর রহমান জানান, পরদিন সকাল ১০ টার মধ্যে তিন হাজারের অধিক মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হলেন ক্যাম্পের মাঠে। অপেক্ষার পালা শুরু হলো। কখন আসবেন প্রিয় প্রধানমন্ত্রী-এমন ভাবনায় অনেকের মধ্যে দেখা দেয় অস্থিরতা। ১১ টার দিকে একজন কর্নেল এসে জানান দিলেন কিছুক্ষণের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘটবে। এই ঘোষণার ঠিক পূর্ব মূহুর্তে কাঠের সাহায্যে তৈরি করা হয় মঞ্চ। ছোট পরিসরের ওই মঞ্চটি তৈরিতে সময় লেগেছিল কয়েক মিনিট। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদ জীপে চড়ে হাজির হলেন ওই ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশস্থলেন। সাথে ছিলেন চার নম্বর সেক্টর কমান্ডার সি এর দত্ত। প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন মঞ্চে উঠলেন। সাথে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্তসহ কয়েকজন আর্মি অফিসার। এর আগে মুক্তিযোদ্ধাদের জানিয়ে দেয়া হলো প্রধানমন্ত্রীকে কেউ কিছু বলতে চাইলে, বলতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগে বক্তব্য দিলেন সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্ত। তিনি বললেন অচিরেই বাংলাদেশ শত্রæমুক্ত হবে। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদ বক্তব্য রাখলেন। তিনি প্রথমেই নিজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিলেন। তারপর বললেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। এই মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে পাকিস্তানিদের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করা। আর দেশ শত্রæমুক্ত হওয়া বেশি দূর নয়। অচিরেই বাংলাদেশ শত্রæমুক্ত হবে। এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ পাকিস্তানিদের বর্বরতা থেকে মুক্তি পাবেন। এই কৃতিত্ব হবে মুক্তিযোদ্ধাদের। দেশ শত্রæমুক্ত হবে, সুফল ভোগ করবেন সবাই। সেদিন আর বেশি দূরে নয়। বক্তব্য শেষ করেই প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদ মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে গিয়ে ঘুরতে লাগলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কথা বলেননি কেউ। প্রায় ৩০ মিনিট অবস্থানের পর প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদ সেখান থেকে প্রস্থান করলেন।