ঢাকা, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে হলুদ আর হলুদ

মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান, গাজীপুর : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৪৫:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

গাজীপুরে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে সরিষা ফুল। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। বাতাসে সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধ। এবার পুরো গাজীপুরজুড়ে প্রতিটি মাঠে সরিষার আবাদ হয়েছে চোখে পড়ার মতো।

আর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই কৃষকের ঘরে উঠবে সরিষা। কম খরচে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা আগাম জাতের ও অধিক ফলনশীল এই ফসলের চাষ করেছেন।  

 

কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নত জাতের সরিষার চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে আমন ও বোরো চাষের মাঝামাঝি সময়টাতে পতিত জমিতে সরিষা চাষের একটি প্রচলন তৈরি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। যা সম্ভব হচ্ছে স্বল্প জীবনকালের সরিষার জাত উদ্ভাবনের ফলে। 

রোপা আমন-পতিত-বোরো শস্য বিন্যাসে স্বল্প জীবনকালের আমন ধান সংগ্রহের পর স্বল্প জীবনকালের অথচ উচ্চ ফলনশীল সরিষার জাত বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯ ও বিনা সরিষা-১০, বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫ এবং বারি সরিষা-১৭ চাষ করা হচ্ছে।

ফলে আমন ধানের পরে ওই পতিত জমিতে স্বল্প সময়ে সরিষার আবাদ হচ্ছে। পরে এ শস্য বিন্যাসটি পর্যায়ক্রমে রোপা-আমন-সরিষা-বোরোশস্য বিন্যাসে রূপান্তরিত হচ্ছে। এ শস্য বিন্যাসে প্রতিকূলতা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল বিনা সরিষা-৯ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে আরও বেশি জমিতে সরিষা আবাদসহ উচ্চ ফলনের মাধ্যমে সরিষার উৎপাদন বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। 

এ উদ্ভাবনগুলো জনপ্রিয় করতে কাজ করছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)।

এ বিষয়ে বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, স্বল্প সময়ের জাতগুলো ফলনের পাশাপাশি কৃষকের আয়ও বাড়াচ্ছে। ফলে এতে আগ্রহ ও জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। 

দেশের প্রধান তেলবীজ সরিষার আবাদ বাড়ানো সম্ভব হলে একদিকে ভোজ্যতেলের বিশাল সংকট কেটে যাবে, অন্যদিকে তেলের জন্য সরকারকে প্রতিবছর খরচ করতে হয় ২৭ থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকার বিপুল ভার, যা সাশ্রয় হবে।

জানা যায়, উচ্চ ফলনশীল বিনা জাতের সরিষার ফলন বিঘাপ্রতি সাত মণেরও বেশি। বাজারে ভালো দাম হওয়ায় বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা লাভ সম্ভব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে প্রায় ৩৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। কৃষকের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

 
গাজীপুর জেলায় উন্নত জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে। স্বল্প সময়, কম খরচ ও কম পরিশ্রমে এ ফসলের আবাদ হয়ে থাকে।  পরবর্তীতে সরিষার জমিতে কম খরচে বোরো আবাদ করেন চাষিরা। ফলে সরিষার বিক্রির টাকা দিয়ে বোরো আবাদের খরচ কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারেন।

 

 

 

 

জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার  সরিষা চাষী  লোকমান হোসেন বলেন, বাজার ভালো থাকায় প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দরে। সরিষা আবাদে সময় ও সেচের প্রয়োজন কম। আবার বীজের কোনো সমস্যা হয় না। সব মিলিয়ে কম খরচে বেশি লাভের জন্য সরিষা এখন সেরা ফসল। 

কালিয়াকৈরের বাহাদুর গ্রামের কৃষক আবুল হাসান জানান, দুই বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছেন।

আবাদও ভালো হয়েছে। আর কিছু দিনের মধ্যে ফসল ঘরে উঠবে। এখন ভালো দাম পেলেই হয়।

 

কালিয়াকৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলা ১৪শ জন কৃষকের মাঝে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন চাষিরা।