ঢাকা, রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১

দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে তাই ঘরে ফেরা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা বানভাসিরা

মোঃ জালাল উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৫ জুলাই ২০২৪ ০৭:৩৭:০০ পূর্বাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন
মৌলভীবাজার জেলায় চলমান দুই দফা বন্যার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো দুর্ভোগ কাটেনি বন্যার্তদের। হাওর তীরবর্তী এলাকায় চলমান বন্যার আশানুরূপ উন্নতি হয়নি এখনো। তাই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বানভাসিরা নিজের বসতবাড়িতে যেতে ছটফট করলেও সম্ভব হচ্ছে না। তারা দীর্ঘদিন থেকে আশ্রয়কেন্দ্র ও অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে বন্দিদশা থেকে নিজ বসতভিটায় ফেরার তীব্র অপেক্ষায় নাজেহাল। কিন্তু এখনো বানের পানি তাদের বসতঘর ও উঠান হাঁটু পানির দখলে। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নদী তীরবর্তী এলাকায় দৃশ্যমান উন্নতি হলেও এখনো বেহাল দশা হাওর তীরবর্তী এলাকায়। হাকালুকি হাওর তীরবর্তী জেলার কুলাউড়া, জুড়ী বড়লেখা। এই ৩টি উপজেলার বন্যাকবলিত হাওর তীরের অধিকাংশ মানুষ এখনো নিজ ঘরবাড়ি ছাড়া। গতকাল বিকেলে হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়ার ভূকশিমইল ইউনিয়নের সাদিপুর, মীরশংকর, গৌরিশংকর, মদনগৌরিসহ জুড়ীর জায়ফর নগর ইউনিয়ন ও বড়লেখার তালিমপুর ইউনিয়নের একাধিক গ্রাম ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। বানভাসিরা বলেন, তারা রান্নাকরা খাবার,  বিশুদ্ধ পনি, স্যানিটেশন সংকট ছাড়াও পানিবাহিত নানা রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। সঙ্গে তাদের গৃহপালিত অবলা প্রাণীগুলোও বেহাল দশায়। তারা ক্ষোভের সঙ্গে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ১৫ কেজি চাল ছাড়া সরকারি তরফে আর কিছুই পাননি। এটাও সবার ভাগ্যে জোটেনি।  আর ব্যক্তি ও নানা সংগঠনের উদ্যোগে প্রথম দিকে ওরস্যালাইন, পানি, চিড়া, মুড়ি, গুড়সহ মাঝে মধ্যে রান্না করা খাবার দিলেও এখন আর কেউ খোজই নিচ্ছে না। অন্যান্য বছরের মতো এবছর সহায়তা মিলছে কম। বন্যায়আয় উপার্জন হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বন্যা দুর্গতদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। একমাস অতিবাহিত হলেও এখনো তারা নিজ ঘর-বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। বানের পানি সড়ক থেকে নামলেও ঘরবাড়িতে হাঁটু ও কোমর পান। তারা নিয়মিত বাড়ির খোঁজ খবর রাখছেন। জানালেন বানের পানিতে আসা বিষাক্ত সাপ ও কিটপতঙ্গ আশ্রয় নিয়েছে তাদের বসতঘরে। এই ভয় ছাড়াও ঘরবাড়ি আফাল ও বলনে (বড় ঢেউ)'র্ তোড়ে বিধ্বস্ত।  এগুলো মেরামত করার মতো আর্থিক সাধ্য নেই তাদের।  কী করবেন তা ভেবে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রাতদিন একাকার। বানভাসিরা বলেন, বারবার এমন চরম দুর্ভোগ। আর প্রতিবারই নানা আশ্বাসের ফুলঝুরি। কিন্তু বন্যা শেষ হলেও যেই সেই। এ থেকে স্থায়ী পরিত্রাণের জন্য কোনো উদ্যোগই নেই সংশ্লিষ্টদের। আমরা আর ত্রাণের নামে ভিক্ষা নিতে চাই না। হয় আমাদের বন্যার দুর্ভোগ থেকে স্থায়ী সমাধ দিন।  না হয় আমাদের মেরে ফেলুন। বারবার সবকিছুই হারিয়ে নিঃস্বার্থ হই। আবার নতুন করে সবকিছু পড়তে হয়। সেই আর্থিক সাধ্য নেই আমাদের। জানা যায়, জেলায় ১৬ই জুন থেকে বন্যা শুরু হয়। এরপর পুনরায় ২রা জুলাই ২য় দফা বন্যা হয়ে এখনো চলমান। বানের পানি না কমে এখন তা দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে। তাই চরম দুর্ভোগে পড়ছেন বানভাসিরা। এখন বাড়ি ফেরা আর পুনর্বাসনের দুশ্চিন্তা আশ্রয়কেন্দ্র ও অন্যত্র থাকা বানভাসিদের। কিছুতেই এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই মিলছে না। এমনটিই জানালেন দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি তীরের বানভাসি মানুষ। অনেকেই জানালেন ঈদের দিনও তারা অর্ধাহারে-অনাহারে ছিলেন। স্থানীয় দুর্ভোগগ্রস্তদের জোরালো দাবি বন্যা ও দীর্ঘ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থানী সমাধানে অবিলম্বে দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওর এবং মনু, কুশিয়ারা, ধলাই ও জুড়ী নদীসহ অন্যান্য নদী সংস্কারসহ বাঁধ নির্মাণের।