ঢাকার দোহার পৌরসভার মেয়র সহ ১২ জন কাউন্সিলর আত্নগোপনে রয়েছে। এছাড়াও উপজেলা ও পৌরসভার বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিগনের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছেন। ফলে এ অঞ্চলের উন্নয়নমূলক কাজ,ট্রেড লাইসেন্স,জন্ম-নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ ও মৃত্য সনদসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবাদান বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় সরকারের সব স্তরেই আওয়ামী লীগ তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর স্থানীয় সরকারের এই জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই আত্মগোপনে চলে গেছেন। ফলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এ ছাড়া অনেক জনপ্রতিনিধি এলাকায় থাকলেও কার্যালয়ে যাচ্ছেন না।
আগে সব ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হতো। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৫ সালের আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার পর বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করে। ফলে স্থানীয় সরকার
প্রতিষ্ঠানগুলোয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে
অভিযোগ বিভিন্ন মহলের।সরকার পতনের আগে ৫ আগষ্ট সকল জনপ্রতিনিধিগন দোহারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীসহ অন্তত: মোট ৬৪ জনকে আহত করার ঘটনার ঘটেছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সংবাদ পেয়ে গা-ঢাকা দেন আ’লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান,মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানরা। এতে উপজেলা/পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সকল সেবা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। আত্মগোপনে চলে যান সকল জনপ্রতিনিধিগন। অনেকের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁদের অনুপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহী প্রকৌশলীরা অফিস চালাচ্ছেন। তবে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা আত্মগোপনে থাকা জনপ্রতিনিধিদের কাছে থাকায় নিয়মিত কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।অপরদিকে গনঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপি,ছাত্র-জনতার সবাই মিলে দোহার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা দক্ষিন ছাত্রলীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন সোহাগের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।এছাড়াও পৌর মেয়র আলমাছ উদ্দিনের কার্যালয়, উপজেলা পরিষদের কার্যালয়, পৌরসভা আওয়ামীলীগের যুগ্ন-আহবায়ক ও জয়পাড়া বনিক সমিতির বিতর্কিত নেতা দেলোয়ার হোসেন মাঝিসহ অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি বিএনপির লোকজন এঘটনা ঘটিয়েছে। এদিকে বিএনপির শীর্ষনেতারা হুশিয়ারি দিয়েছেন কোন কর্মী যেন সহিংশতায় না যান। এছাড়াও সারা দেশের ন্যায় দোহার থানা ও ২টি পুলিশি তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা রাতের আধারে গা-ঢাকা দেন।পরবর্তীতে গত ১০ আগষ্ঠ দেশে চলমান প্রেক্ষাপটে বিরাজমান উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে পরিত্রান পেতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে দোহারের পরিস্থিতি শান্ত হয়।সেনাবাহিনী গত রোববার (১১ আগস্ট) উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে থানা এলাকা ও উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,শিক্ষক মন্ডলী,সাংবাদিক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বে থাকা বিগ্রেড কমান্ডার মেজর সায়েম আহম্মেদ,মেজর ইফতেখার ও ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ তার সেনা ফৌজের সহযোগিতায় বিরাজমান উদ্ভুত পরিস্থিতি শান্ত হয়। গতকাল সোমবার সকাল থেকেই দোহারের সকল পুলিশ সদস্যরা যোগদান করলে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হয়ে উঠে। এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.জাকির হোসেন বলেন, উর্ধত্বন কতৃপক্ষ আমাদের কাছে মাঠ পর্যায়ের তথ্য চেয়েছেন। তারা আরও নির্দেশ দিয়েছেন যে, নাগরিক সেবা ও উন্নয়ন কাজ চলমান রাখতে প্যানেল চেয়ারম্যান ও প্যানেল মেয়রের অথবা প্রশাসক নিয়োগ দেবে সরকার।