নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে। আজ রোববার (১৬ জানুয়ারি) নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ একটানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সবগুলো কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে।
শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করেই সকালে ভোটাররা দলে দলে কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন। ভোটকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে।
ভোটাররা বলছেন, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের সিটি মেয়রকে বেছে নেবেন। তারা আশা করছেন, ভোটগ্রহণের শুরু থেকে গণনা পর্যন্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বিরাজমান থাকবে।
নারায়ণগঞ্জ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ভোটার মোহাম্মদ শামসুর রহমান বলেন, ভোটকেন্দ্রে উৎসাহ-উদ্দীপনার পরিবেশ বিরাজ করছে। সকাল সকাল ভোট দিতে চলে এসেছি। আমি শুধু একা নই, আমার বাড়ির আশপাশের অনেকেই একসঙ্গে ভোট দিতে এসেছি।
কদম আলী নামে আরেক ভোটার বলেন, সকাল সকাল ভোট দিতে আসা ভালো। এ সময় ভিড় কিছুটা কম থাকে। ভোটের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে পরিবেশ নিরাপদ রয়েছে।
কেন্দ্রটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন সদর থানার উপ-পরিদর্শক নুরে আলম, আপনারা জানেন সকাল ৮টা থেকে যথাসময়ে এ কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। শতভাগ নিশ্চিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমরা এখানে নিশ্চিত করেছি। ভোট কেন্দ্রে কোনো ধরনের অনিয়ম বা অরাজকতা সৃষ্টির কেউ চেষ্টা করলে আমরা তার শক্ত হাতে দমন করব।
কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং অফিসার আরজু মিয়া বলেন, এই কেন্দ্রের পুরুষ ভোটার তিন হাজার ২৮৭ জন। সকাল ৮টা থেকে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।
এদিকে নাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা শহরজুড়ে নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে। অন্যদিকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নাসিক নির্বাচন এলাকা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন রয়েছেন।
এ বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় মোতায়েন রয়েছেন। নির্বাচনের পরিবেশকে উৎসবমুখর রাখতে যা যা করণীয় তারা তাই করছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ করার চেষ্টা করলে বা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে বলেও তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
নির্বাচনে মেয়র পদে নাম আছে সাত প্রার্থীর। কিন্তু সব আলোচনা সীমাবদ্ধ দুই প্রার্থীর মধ্যে। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার।
শনিবার ইসির জনসংযোগ পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, ১৯২টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষ থাকবে। মোট ইভিএম ২ হাজার ৯১২ ইউনিট। স্মার্টবুথ রয়েছে ২টি কেন্দ্র। মডার্ন গার্লস স্কুল (১২৩ ও ১২১ কেন্দ্র), ওয়ার্ড নম্বর- ৬। ১৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টি কেন্দ্রকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলোতে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।
ভোটকক্ষে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন ও হিজড়া ভোটার ৪ জন। ভোটের মাঠে মেয়র পদে সাতজন, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৩৪ জন ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৪৫ জনসহ মোট ১৮৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি ভোটে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়াল ঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কামরুল ইসলাম (ঘোড়া), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার (হাতি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাত ঘড়ি)।
একই সঙ্গে ৯টি সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৩৪ জন এবং ২৭টি সাধারণ সদস্য পদে ১৪৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
২০১১ সালে নির্দলীয় ভোটে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ও দেশের প্রথম নারী মেয়র হয়েছিলেন সেলিনা হায়াৎ আইভি। এরপর ২০১৬ সালে দলীয় প্রতীকে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে দ্বিতীয়বার মেয়র হন আইভী।
এদিকে, টাঙ্গাইল-৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন প্রার্থী। তারা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের খান আহমেদ শুভ (নৌকা), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির গোলাম নওজব চৌধুরী (হাতুড়ি), জাতীয় পার্টির মো. জহিরুল ইসলাম জহির (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের রূপা রায় চৌধুরী (ডাব) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম নুরু (মোটরগাড়ি)।
টাঙ্গাইল-৭ আসনে মোট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৩৭৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ১২১টি ভোটকেন্দ্রের ৭৫৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও, চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, নোয়াখালী জেলার নোয়াখালী, যশোর জেলার ঝিকরগাছা, নাটোর জেলার নাটোর ও বাগাতিপাড়া পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৬ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে ১৬ জন স্বতন্ত্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যরা বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। এসব স্থানে সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।