ঢাকা, শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
পরিকল্পিত হত্যার দাবী প্রবাসীর স্ত্রী 'র

নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা প্রবাসীর

মো :ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১ নভেম্বর ২০২২ ০৭:১৭:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
সোমবার (৩১ অক্টোবর) সকালে জসিম মোল্লা নামে সৌদি আরবের তাবুক শহরে নিজের কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বাকপ্রতিবন্ধী স্ত্রী ও তিন ছেলেসন্তান রয়েছে তার। প্রায় ৪ বছর আগে ভায়রার মাধ্যমে দোকানের ভিসায় সৌদি আরবে যান। কিন্তু ভায়রা কোনো বেতন না দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করত জসিমের ওপর। এ নির্যাতন সইতে না পেরে ও বাড়িতে টাকা পাঠাতে না পারায় অবশেষে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
 
রোববার সকালে স্ত্রী ও বড় ছেলেকে ফোন করে বলেন- ‘বেতন দেয় না, দেশেও আসতে পারছি না, আমাকে আর জীবিত দেখতে পারবে না।’ এর পরেই তার মৃত্যুর সংবাদ পান স্বজনরা। 
 
এ ঘটনায় সোমবার রাতে (৩১ অক্টোবর) নিহতের স্ত্রী রুনা বেগম ও বড়বোন স্বপ্না বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্ত দুলালকে আসামি করে রায়পুর থানায় মামলা করেছেন।নিহত প্রবাসী জসিম মোল্লা লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে চরমোহনা ইউপির দক্ষিণ রায়পুর গ্রামের মোল্লার বাড়ির মনিরের ছেলে।
 
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ বছর আগে ধারদেনা করে ৫ লাখ টাকা দিয়ে চালকের ভিসায় ভায়রা দুলালের মাধ্যমে সৌদি আরব যান। সৌদি আরব গেলেও ভায়রা জসিমকে দোকানের ভিসায় কাজ করান। কোনো বেতন বা সুযোগ-সুবিধা দিতেন না। যখনই বেতন চাইতেন তখনই ভায়রা দুলাল তাকে মানুষিক নির্যাতন করত। ২-৩ বার মারধরও করেছে। সে কারণে দেশে স্ত্রী-সন্তানদের জন্য টাকা পাঠাতে পারতেন না। এতে সংসারে অশান্তি ও পরিবারের লোক মানবেতর জীবনযাবন করছিল। 
 
গত ২০-২৫ দিন আগে নিহত জসিমকে কেন বেতন দেওয়া হয় না ও দেশে আসার জন্য শ্বশুর মো. হাসান মিয়া তার বড় জামাতা দুলালের কাছে জানতে চান। দুলাল সঠিক উত্তর না দিয়ে তার শ্বশুরের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। রোববার সন্ধ্যায় নিহত জসিম গত ৩ মাস ধরে দেশে আসতে চান কিন্তু দুলালের কারণে আসতে পারছেন না, হয়তো তোমাদের সঙ্গে আর দেখা নাও হতে পারে- এই বলে পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা বলেন। 
 
সোমবার সকালে জসিমের আত্মহত্যার ঘটনা তারই শ্বশুরের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন। এ ঘটনার ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অবহিত করে থানায় মামলা করেন।
 
নিহত জসিমের শ্বশুর হাসান মিয়া জানান, আমার বড় জামাতা দুলাল খারাপ লোক। সে ছোট জামাতাকে সৌদি আরব নিয়ে বেতন দিতো না। অমানুষিক নির্যাতন করত। বেতন না পেয়ে কষ্টে জীবনযাপন করত এবং দেশে আসতে না পেরে মনের কষ্টে নিজের কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়। তার লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে।
 
এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুলাল জানান, আমি ৩ মাস আগে সৌদি আরব থেকে ছুটিতে বাড়িতে আসছি। আমার ছোট ভায়রা নিহত জসিম মোল্লা আমার সঙ্গে থাকতেন। দোকানের ভিসায় সৌদি আরব আনি তাকে। সব মাসের বেতন পরিশোধ করেছি। কয়েক দিন আগেও তার পাওনা ৪০ হাজার টাকা শ্বশুরের মাধ্যমে পরিবারকে দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
 
এ ব্যাপারে রায়পুর থানার ওসি তদন্ত হাসান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রবাসী জসিম সৌদি আরবে আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার বিষয়ে তার বোন রুনা বেগম দুলাল নামের একজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।