ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
গত ৩ বছরে খুন-৪৪, মামলা-৪৭২

প্রত্যাবাসন রুখতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা'র গুম খুন!

স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী, কক্সবাজার: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৩:৪৬:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

যখন বাংলাদেশ-মিয়নামার মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কুটনৈতিক আলোচনা জোরদার হয় আর তখনই উত্তপ্ত হয়ে উঠে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। 

 

অনেকের ধারণা, 

 

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে চলমান বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার কূটনৈতিক তৎপরতা থামাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে আরকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) ।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত হয়েছে ৪৪ জন রোহিঙ্গা। এছাড়া ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে আরও ৩২ রোহিঙ্গা। আরর্্যাবের অভিযানে  এ পর্যন্ত ধরা পড়েছে প্রায় ৩০ জন আরসা নেতা।

 

 ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের প্রবেশের পর ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, মাদক ও মানবপাচারসহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৭২টি। যার মধ্যে মাদক মামলা ২০৮, হত্যা মামলা ৪৪ ও নারী সংক্রান্ত মামলা ৩১ টি। এসব মামলায় আসামি ১০৮৮ রোহিঙ্গা। তাই এদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

 

প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য বিতর্কিত এই উগ্রপন্থী সংগঠনের সদস্য ও সমর্থকেরা প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক সাধারণ রোহিঙ্গাদের বিভ্রান্তি করার পাশাপাশি হত্যা,গুমসহ বড় নাশকতার মাধ্যমে ভয়ভীতি ছড়াতে কাজ করছে।

 

সমর্থকরা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে ক্যাম্পগুলোর ব্লক কেন্দ্রিক ডিজিটাল সেল গড়ে তুলে সশস্ত্রদের নাশকতার পরিকল্পনাকে করছে সহায়তা।

 

অব্যাহত আছে বিরোধীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে গোলাগুলি, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাৎ করা রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখানো সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। 

 

যার অংশ হিসেবে গত ১ নভেম্বর রাতে উখিয়ার মধুরছড়া এলাকার ৪ এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিরোধীদের সাথে আই ব্লকের ‘ডিজিটাল সেল’ এর সহায়তায় গোলাগুলিতে জড়ায় ১২/১৫ জন আরসা সদস্য। গত দুই সপ্তাহে ধরা পড়েছে ১১ জন আরসা সদস্য। কিছুদিন আগে আরসার’ শীর্ষ কমান্ডার ও ১৩ মামলার আসামি মাত্তুল কামাল ওরফে নুর কামাল হাসিম উল্লাহকে গ্রেফতার করে এপিবিএন।  এছাড়াও একই দিন রাতে র‍্যাব-১৫ এর হাতে গ্রেফতার হয় আরেক শীর্ষ কমান্ডার আব্দুল মোতালেব প্রকাশ হেফজুর রহমান।

 

স্থানীয়রা জানিয়েছে,  রোহিঙ্গারা বাইরে লোকালয়ে এসেও মাঝে মাঝে অপহরণ, মুক্তিপণ ও মাদকের মতো কাজেও জড়িয়ে পড়ে। এতে করে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের কারণে দেশের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হওয়ার আশংঙ্কা করা হচ্ছে। 

 

দিন যত যাচ্ছে ততই অবনতির দিকে যাচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। মানবতার দোহাই দিয়ে যাদের আশ্রয় দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা, সেসব রোহিঙ্গারাই এখন তাদের কাছে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইয়াবা পাচার, ডাকাতি-চুরি ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে গত দুই বছরে চার শতাধিকের বেশি মামলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পরবর্তী দিনগুলো নিয়ে শঙ্কিত স্থানীয়রা।

 

২০১৭ সালে মিয়ানামার থেকে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে৷ এখন তা বেড়েে প্রায় ১৬ লাখ বলে ধারণা করে স্থানীয়রা। যদিওবা সরকারী হিসাবে তা ১১ লাখ।

 

এদিকে, গত ৩১ অক্টোবর মিয়ানমারের ৩২ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসে প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের সাথে টেকনাফে আলোচনায় অংশ নেয়।

 

এসময় রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করা ৩৬৮ জনের অধিকাংশই প্রতিনিধিদের কাছে মর্যাদার সাথে নিজ দেশে ফেরার প্রত্যয় জ্ঞাপন করেন। এসময় মিয়ানমারের আগ্রহ প্রকাশ পেলেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, প্রত্যাবাসন ঠেকাতে আরসার কর্মকান্ড বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্তকোন্দলে খুন খারাবি হচ্ছে। জেলা পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনী সরকারের নির্দেশে তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

 

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, সব বিষয়ে আমরা নজরে রাখছি। প্রত্যাবাসনে মায়নামারের সাথে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। খুব শীঘ্রই ভাল কিছু দেখবেন।