আজ সকাল থেকে প্রথম দিনের অফিস শুরু করেছেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তাদের শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং দলীয় নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে প্রথম কর্মদিবসে নতুন মন্ত্রীদের অভিব্যক্তি তুলে জানতে সচিবালয়ে ভিড় করছেন গণমাধ্যম কর্মীরাও। তাদের সামনে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ও প্রত্যয় তুলে ধরছেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) প্রথম অফিসে যোগ দিয়েই ৭ দিনের মধ্যে ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা দেওয়ার ঘোষণা দিলেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি বলেন, আমরা চাই এটা যাতে এক নম্বর মন্ত্রণালয় হয়। আমার পক্ষ থেকে আইনের প্রতি শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবো। মিডিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবো।সাতদিনের মধ্যে একশ দিনের পরিকল্পনা দিতে চাই। এছাড়াও অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবো।
এরপর তিনি বলেন, বায়ু দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে। বন সংরক্ষণ করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্যই পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। এখানে দুর্নীতি বা অনিয়ম প্রশ্রয় দেবো না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সেই অগ্রগতিকে টেকসই করতে হবে। সব মিলিয়ে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার পূরণ করবো। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। কাজের জন্য কোনো কাঠামো বদলের দরকার হলে সেটা করতে হবে। আমাদের কাজের সঙ্গে যা দরকার সেটা করবো।
সাবেক মন্ত্রীর সহায়তা নিয়ে আরও নতুন কিছু শেখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নতুন কৃষিমন্ত্রী মোঃ আবদুস শহীদ। তিনি বলেন, ‘ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, এর আগে যিনি কৃষিমন্ত্রী ছিলেন, তিনি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মানুষ। আমি আশা করবো সব কর্মকর্তা আমাকে সাহায্য করবেন।’
এরপর তিনি বলেন, ‘আমি পেশায়-নেশায় সবকিছুর মধ্যে কৃষক। লেখাপড়া করেছি, অধ্যাপনা করেছি, পিএইচডি ডিগ্রিও আমি নিয়েছি। সবকিছুতেই মোটামুটি টাচ দিয়ে এসেছি। চিফ হুইপ ছিলাম, সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অ্যাকটিভিটি ছিল আমার। তারপরও বলবো আমি এখনো শিখতেছি। শেখার শেষ নেই। আমি শিখেই কাজ করতে চাই।’
‘আমাদের কৃষকদের উন্নতির জন্য যা প্রয়োজন, আমাদের ক্ষমতার মধ্যে যা আছে করবো। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, উদ্যোক্তারা সবাই মিলে যদি কাজ করি, এ শক্তি কিন্তু বড় শক্তি, এর রেজাল্টও কিন্তু আমরা পাবো।’- যোগ করেন মোঃ আবদুস শহীদ।
এদিকে শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে সমালোচনা আছে উল্লেখ করে প্রয়োজনে কারিকুলামের মূল্যায়নে অবশ্যই পরিবর্তন আনা হবে বলে জানিয়েছন মন্ত্রিসভার কনিষ্ঠতম সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, শিক্ষাবর্ষ মাত্র শুরু হয়েছে। ধারাবাহিক মূল্যায়নের কাজগুলোও শুরু হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা মনে হলে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। নতুন কারিকুলাম হঠাৎ করে আসেনি। এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকাটাই স্বাভাবিক। এগুলো মাথায় রেখেই দুর্বলতা ও সমস্যা থাকলে সমাধান করা হবে।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে নওফেল বলেন, শিক্ষায় একটা ধারাবাহিকতা থাকে। সেই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে রূপান্তর ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে। স্মার্ট সিটিজেন তৈরি করার জন্য স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেম আমাদের প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করব। স্মার্ট সিটিজেন তৈরি করার জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা প্রয়োজন। কর্মসংস্থানের জন্য মাল্টি স্ক্রিল স্মার্ট সিটিজেন আমাদের প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণায় জোরদার করা প্রয়োজন।
এ সময় সাবেক সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডা. দীপু মনির সঙ্গে কাজ করেছি। চ্যালেঞ্জ দেখেছি। তিনি সফল মন্ত্রী। শিক্ষা রূপান্তরের কাজ করছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
নতুন শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি শুভকামনা জানিয়ে নিজের নতুন দপ্তরের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন ডা. দীপু মনিও। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগদানের প্রথমদিনই প্রধানমন্ত্রীর আস্থা পূরণে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নতুন সমাজকল্যাণমন্ত্রী।
বিমানসেবা উন্নত করার জন্য কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন নতুন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান।নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি আগেও এই মন্ত্রণালয়ে ছিলাম। সুতরাং এখানকার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমি জানি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে যে কাজগুলো চলছে, সেগুলো যাতে দ্রুত শেষ হয় সেদিকটা দেখব। যাত্রী সেবা, লাগেজ হ্যান্ডেলিং কিভাবে আরো উন্নতি করা যায় এবং কিভাবে আরো নতুন নতুন ডেস্টিনেশনে বিমান যেতে পারে, সেগুলো দেখার চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মপরিকল্পনায় সব মন্ত্রণালয়ের প্রতি স্পষ্ট দিক নির্দেশনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মপরিকল্পনায় কোন মন্ত্রণালয় কি করবে সেটি বলা আছে, সেই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবো। এর বাইরে বিভিন্ন সময় যে বিষয়গুলো আলোচনায় আসবে সেগুলো করব।
নতুন কর্মসংস্থলে যোগ দিয়েছেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও। তথ্য মন্ত্রণালয়ে থাকার সুবাদে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনিই। এবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো চ্যালেঞ্জিং একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। তার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তাও পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কর্মপরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নাম সমুন্নত রেখে পূর্ব-পশ্চিম সবার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো করার ক্ষেত্রে কাজ করে যাবেন তিনি।
এদিকে দেশি বিদেশি সব চাপ মোকাবিলায় নতুন সরকার সক্ষম বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।সচিবালয়ে নিজের নিয়মিত দফতরে যোগদান করেই ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নতুন মন্ত্রিসভায় বিদেশ থেকে চাপ আছে। আর দেশে তো আছেই। তবে আমরা সব চাপ মোকাবিলা করতে সক্ষম। কারণ জনগণ সঙ্গে থাকলে কোনো চাপই মোকাবিলা করা অসম্ভব নয়।
সামনের দিনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, মানুষের জীবনে রাজনীতি বলুন, অর্থনীতি বলুন সবক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে কোনো চ্যালেঞ্জই মোকাবিলা করা অসম্ভব নয়। অনেকেই ভেবেছে নির্বাচন করতে পারব না। কিন্তু তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে।আমরা যখন পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করেছিলাম তখন কেউ ভাবেনি এটা শেষ করা সম্ভব হবে। বিশ্বব্যাংকও পাশে ছিল না। কিন্তু আমরা পদ্মাসেতু করতে পেরেছি। মেট্রোরেল দিয়ে যে এই শহর সমৃদ্ধ হবে এ কথাও কেউ ভাবেনি। কিন্তু সেটাও শেখ হাসিনার সরকার উপহার দিয়েছে। সামনে আমাদের আরও অনেক কাজ আছে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভা গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সন্ধ্যায় শপথও নিয়েছেন নতুন সদস্যরা। এরপর তাদের দায়িত্ব বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পূর্ণ মন্ত্রীদের মধ্যে আ ক ম মোজাম্মেল হককে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়; ওবায়দুল কাদেরকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে অর্থ মন্ত্রণালয়; আনিসুল হককে আইন মন্ত্রণালয়; নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে শিল্প মন্ত্রণালয়; আসাদুজ্জামান খানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; মো. তাজুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়; মুহাম্মদ ফারুক খানকে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়; মোহাম্মদ হাছান মাহমুদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; দীপু মনিকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়; সাধন চন্দ্র মজুমদারকে খাদ্য মন্ত্রণালয়; আবদুস সালামকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়; মো. ফরিদুল হক খানকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে ভূমি মন্ত্রণালয়; জাহাঙ্গীর কবির নানককে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়; মো. আবদুর রহমানকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়; মো. আবদুস শহীদকে কৃষি মন্ত্রণালয়; ইয়াফেস ওসমানকে (টেকনোক্র্যাট) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; সামন্ত লাল সেনকে (টেকনোক্র্যাট) স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়; মো. জিল্লুল হাকিমকে রেলপথ মন্ত্রণালয়; ফরহাদ হোসেনকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়; নাজমুল হাসানকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; সাবের হোসেন চৌধুরীকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মহিবুল হাসান চৌধুরীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ১১ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে নসরুল হামিদকে বিদ্যুৎ বিভাগ; খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়; জুনাইদ আহ্মেদকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; জাহিদ ফারুককে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; সিমিন হোসেন রিমিকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়; কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়; মহিববুর রহমানকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়; শফিকুর রহমান চৌধুরীকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; রুমানা আলীকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আহসানুল ইসলামকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।