ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফুটবলকন্যাদের জয়ের উচ্ছ্বাস পাহাড়ি জনপদেও

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৪:০২:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

 

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচে শুরু থেকে ভারতের রক্ষণভাগে চাপ অব্যাহত রাখে মারিয়া-আখিরা। দু’বার দুটি গোলও বাতিল করেন রেফারি। খেলার শেষ দিকেও যখন কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা মিলছিল না, ঠিক তখন শাহেদা আক্তার রিপার ব্যাকহিল থেকে বল ধরেই দূল্লার শট করে ৭৯ মিনিটে লাল সবুজের বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন খাগড়াছড়ির মেয়ে আনাই মগিনি।

মুহূর্তের মধ্যেই বল কাঁপিয়ে দেয় ভারতের জাল। এ এক গোলই শেষ পর্যন্ত শিরোপা নির্ধারণ করে দেয়। এরপরই উৎসবে মাতে বাংলাদেশ।

আনাই মগিনির গোলের পরপরই উল্লাসে ফেটে পড়ে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের দর্শকরা। শুধু ঢাকার স্টেডিয়ামই নয় সেই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে খাগড়াছড়ির নিবৃত পাহাড়ি পল্লী সাতভাইয়া পাড়া এলাকায়। বিতরণ করা হয় মিষ্টি।

দেশের হয়ে একমাত্র গোলটি করার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন পাহাড়ের এ ফুটবল কন্যা। উল্লাসে মেতে উঠেছে খাগড়াছড়ির নিবৃত পাহাড়ি পল্লী সাতভাইয়া পাড়ার বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

খাগড়াছড়ির এ পল্লীতে জন্ম ফুটবল কন্যা আনাই মগিনির। তার যমজ বোন আনুচিং মগিনিও বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের গর্বিত সদস্য। বাবা রিপ্রু মগ ও মা আপ্রুমা মগিনির সাত ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবার ছোট তারা। তাদের নিয়ে শুধু পরিবার নয় গর্বিত পুরো পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ি।

একদিন মেয়েরা বিশ্বকাপ ফুটবল খেলবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আনাই মগিনির বাবা রিপ্রু মগ ও মা আপ্রুমা মগিনি বলেন, আমরা চাই ফুটবলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। প্রান্তিক জনপদে জন্ম নেওয়া আমাদের দুই মেয়ে বাংলাদেশ টিমে খেলে এলাকার এবং দেশের সুনাম রক্ষা করেছে।

তারা আরও বলেন, এটা আমাদের সবার জন্য আনন্দের। নিজের মেয়েদের জন্য সবার দোয়া কামনা করছি।

স্থানীয় বাসিন্দা মংসাথোয়াই মারমা বলেন, আনাই মগিনির একমাত্র গোলে বাংলাদেশ জয় পায়। এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। আমরা সবাই একসঙ্গে বসে খেলা দেখেছি। খেলা দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। আমরা চাই তারা দু‘বোন আরও অনেক এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের সাফ ফুটবল জয়ের নায়ক আনাই মগিনির বড় ভাই আম্রু মগ বলেন, আমার বোনের একমাত্র গোলে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে জয় পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের। আমার বোন দেশের সম্মান রক্ষা করেছে।

ননদের গোলে বাংলাদেশ জয় পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত আনাই মগিনির দুই ভাবি রাং মে সু মগিনি ও রুইম্রু সাং মগিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে বসে পুরো খেলা উপভোগ করেছি। আনাই যখন গোল করেছে তখন আমরা সবাই উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছি। এ জয় ভুলার মতো নয়।

ফুটবল কন্যা আনাই মগিনিকে অভিনন্দন জানিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা বলেন, খাগড়াছড়ির সন্তানের গোলে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে। এজন্য আমরাও আনন্দিত। তার জয়ের ধারা অব্যাহত থাকুক।

খাগড়াছড়ির অভাব অনটনের মারমা পরিবারে আসে এক সঙ্গে দুই সন্তান। যা আগে বুঝতে পারেনি তাদের বাবা-মা। আনাই-আনুচিংয়ের জন্মের পর মুখে খাবার দিতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন তাদের বাবা রিপ্রু মগিনি ও মা আপ্রুমা মগিনি। এখন সেই মেয়েরাই বাবা-মায়ের সংসারের হাল ধরেছেন বেশ ভালোভাবেই। তাও আবার ফুটবল খেলে।