বিদায়ের শেষলগ্নে আলোচিত ২০২১ সাল। করোনাভাইরাস মহামারিতে মৃত্যুর মিছিল, শোক, শঙ্কার মধ্যেও ব্যস্ততা ছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টে বিভাগে। নানান কারণে আলোচনায় ছিল উচ্চ আদালতের বিভিন্ন রিট, মামলা ও রায়।
তবে সব ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল পারিবারিক টানাপোড়েন। সন্তানকে কাছে পেতে জাপানি মায়ের হাইকোর্টে ছোটাছুটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর রেশ না কাটতেই সন্তান নিয়ে রিট করেন ভারতীয় আরেক মা। বছরের শেষে সব ছাড়িয়ে আলোচনার কেন্দ্রে আসে সুস্মিতা ও তুষারের ভালোবাসার গল্প। ব্রাহ্মণের মেয়ে সুস্মিতাকে বিয়ে করার কারণে এক মামলায় ১৪ বছরের কারাদণ্ড হয় হরিজন সম্প্রদায়ের তুষারের। সেই দণ্ড থেকে খালাস পান তিনি।
আলোচনায় ছিল ই-কমার্স, চিত্রনায়িকা পরীমনিকে দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়ায় নিম্ন আদালতের বিচারককে হাইকোর্টে তলব, কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার রায়, আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধে রিট, গুগল অ্যামাজন থেকে ট্যাক্স আদায়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা নিয়ে নির্দেশনার মতো অসংখ্য রিট ও মামলার আদেশ।
ঘটনাবহুল বিদায়ী বছরে হাইকোর্ট বিভাগের আলোচিত রিট, মামলা, শুনানি, রুল জারি ও রায় নিয়ে এ প্রতিবেদন।
দুই সন্তান নিয়ে জাপানি মা ও বাঙালি বাবার ‘যুদ্ধ’
বিদায়ী বছর আলোচনায় ছিল দুই শিশুকন্যা নিয়ে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক শরীফ ইমরানের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে লড়াই।
২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরানের এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন।
কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
এরপর গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
দুই শিশুকন্যাকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে শিশুদের হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে ঢাকায় এসে গত ১৯ আগস্ট রিট আবেদন করেন জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো। ৮ সেপ্টেম্বর দুই মেয়েকে নিয়ে বাধাহীনভাবে উন্মুক্ত পরিবেশে চলাচল ও রাতে তাদের সঙ্গে ঘুমানোর অনুমতি পান জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো। আর বাবা দুই শিশুর সঙ্গে দিনের বেলায় থাকতে পারবেন বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
এই দুই শিশুর বিষয়ে মাঝে আরও একাধিক আদেশ হয়েছে। সবশেষ আদেশ অনুসারে, ওই দুই কন্যা আপাতত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে। পরে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
শিশু নিয়ে মা-বাবার টানাটানি
ভারতের বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে হায়দরাবাদের সাদিকা শেখ নামে এক নারীকে পছন্দ করেন রাজধানীর বারিধারার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। মেয়েটিও হায়দরাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। ২০১৭ সালে হায়দরাবাদে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন তারা। কয়েক মাস পর ঢাকায় চলে আসেন ওই দম্পতি। তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে ছেলেসন্তান। ওই নারীকে বাবার বাড়িতে যাওয়া এবং বাড়ির বাইরে বের হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি অভিযোগে গত ৮ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে শিশুসহ বাবাকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে পুলিশ জানায়, ওই বাবা শিশুসহ পালিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছেন। এখন ওই সন্তান নিয়ে বাবা অ্যাস্ট্রেলিয়ায়ই আছেন। হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালন না করায় ওই শিশুর বাবাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
আদালতে আরেক পারিবারিক টানাপোড়েন
২০১৯ সালে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। ১০ বছর বয়সের কন্যাশিশুটি থাকে মায়ের কাছে। কিন্তু এক আবেদনে পারিবারিক আদালত (নিম্ন) শিশুটিকে বাবার কাছে রাখার আদেশ দেন। মায়ের কাছে থাকবে শুধু সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার। এমন আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আসেন ওই শিশুর মা। গত ৪ জুলাই ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ পারিবারিক আদালতের আদেশ স্থগিত করেন। একইসঙ্গে শিশুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার আদেশ দিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, বাবা চাইলে সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
স্বামী-স্ত্রী দুজনই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ২০০৭ সালে তারা ভালোবেসে বিয়ে করেন।
আল-জাজিরার প্রতিবেদন সরানোর নির্দেশ
কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরায় গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হয়, যা ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। প্রতিবেদনে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। সরকারিভাবে এই প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। পরে সেটি নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটে বাংলাদেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনার পাশাপাশি সম্প্রচারিত প্রতিবেদনটি ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটার থেকে অপসারণের নির্দেশনা চাওয়া হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ প্রতিবেদনটি অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন। তবে বাংলাদেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধে কোনো আদেশ দেননি।
কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্নের ষড়যন্ত্র
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স এবং আপিলের ওপর রায়ে ১০ আসামিকে বিচারিক আদালতে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ১৭ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘কোটালীপাড়ায় বোমা হামলার প্রচেষ্টার মাধ্যমে মূলত আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল।’
পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সমগ্র জাতিকে পিছিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। সে অবস্থা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার উন্নত দেশ গঠনের চেষ্টা শুরু করলে তার (শেখ হাসিনা) জনপ্রিয়তাকে ধ্বংস করতে ভয়ঙ্করভাবে চেষ্টা চালানো হয়। এটি দেশের জন্য কালো, জঘন্য ও বর্বরোচিত অধ্যায়।’
৪৮ হাজার শিক্ষকের টাইম স্কেল ফেরতের রিট খারিজ
২০১৩-১৪ সালে বেসরকারি থেকে সরকারি হওয়া (জাতীয়করণকৃত) সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকের টাইম স্কেল সুবিধা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র নিয়ে জারি করা রুল খারিজ করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট। ফলে বেসরকারি থেকে সরকারি হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ‘টাইম স্কেল’ সুবিধা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের বৈধতা পায়। এরপর প্রাথমিক শিক্ষকরা আপিল আবেদন করেন। ওই আপিল শুনানির অপেক্ষায়।
‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যারে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ রায়ের অনুবাদ
দেশে প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ আদালতে ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচটি ইংরেজি রায় বাদী-বিবাদী পক্ষ ও জনসাধারণের বোঝার সুবিধার্থে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চারটি এবং হাইকোর্ট বিভাগের একটি ইংরেজি রায় অনুবাদ করা হয়। গত ৯ মে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমান জানান, বাংলায় অনূদিত রায়কে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহারিক ও সরকারি কাজে শুধু আদালতের প্রকাশিত ইংরেজি রায়টিকে যথার্থ বলে গণ্য করা হবে এবং রায় বাস্তবায়নের জন্য ইংরেজি ভাষায় প্রদত্ত রায়টিকেই অনুসরণ করতে হবে।
আলোচনায় পরীমনিকে রিমান্ডে পাঠানো দুই বিচারক
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনিকে কয়েক দফা রিমান্ডে পাঠানো হয়েছিল এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে। গত ২৯ আগস্ট পরীমনিকে বারবার রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টে স্ব-প্রণোদিত আদেশের জন্য আর্জি জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২ সেপ্টেম্বর বিচারিক আদালতের ব্যাখ্যা ও নথি (কেসডকেট সিডিসহ) তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলার দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে ১৫ সেপ্টেম্বর সশরীরে উপস্থিত হতে বলা হয়। এছাড়া তিন দফায় রিমান্ডের আদেশ দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিচারকের কাছে ব্যাখ্যাও চান আদালত।
পরে ৩১ অক্টোবর দুই বিচারক হাইকোর্টে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তারা হলেন- ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে এ ক্ষমা চাওয়ার আবেদন করেন। আবেদনে তারা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে ব্যাখ্যায় বলেছেন, এটি তাদের অনিচ্ছাকৃত ভুল।
গুগল-অ্যামাজন-ফেসবুক থেকে রাজস্ব আদায়ের নির্দেশ
সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয়াসহ সব রাজস্ব আদায়ে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এ বছরের ২৮ অক্টোবর প্রকাশ করেন আদালত। রায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ প্রতিপালন করতে বলা হয়। এটা বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য পাওনা বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
ইভ্যালি পরিচালনায় বিচারপতি মানিকের নেতৃত্বে কমিটি
বছরের আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম ইভ্যালিকাণ্ড। এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতারণার অভিযোগ ও পরিচালনার নিয়ম পর্যালোচনায় আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে চেয়ারম্যান বা বোর্ডপ্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন হাইকোর্ট। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল কবীর মিলন (অবসরে), চার্টার্ড অ্যাকাউট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। বোর্ড গঠনের নির্ধারিত দিনে এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে ১৮ অক্টোবর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ফ্রি ফায়ার চালু রাখতে হাইকোর্টে সিঙ্গাপুরের গ্যারিনা
অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেমগুলো বন্ধের রুলে পক্ষভুক্ত হতে হাইকোর্টে আবেদন করে সিঙ্গাপুরের গেম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্যারিনা অনলাইন প্রাইভেট লিমিটেড। অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধের রিটে পক্ষভুক্ত হতে ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে এ আবেদন করে তারা। পরে ১০ অক্টোবর এ বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ পরে ২৬ অক্টোবর ধার্য দিনে সেটি খারিজ করে আদেশ দেন।
আলোচনায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছা কাটা
চলতি বছর আলোচনায় ছিল রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ না কাটতে হাইকোর্টের মৌখিক নির্দেশনার বিষয়টি। ওই উদ্যানে গাছ কাটার বিষয়টি নজরে এলে একটি রিট করা হয়। রিটে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিনষ্টকরণ থেকে বিরত থাকতে, এ উদ্যানের শতবর্ষী ও বিলুপ্তপ্রায় পাখিদের আশ্রয়স্থল বৃক্ষগুলোকে না কাটতে এবং ইতোমধ্যে কর্তন করা বৃক্ষগুলোর জায়গায় একই প্রজাতির তিনগুণ বৃক্ষরোপণের দাবি জানানো হয়।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফরমস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত মৌখিক নির্দেশনাটি দেন এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেন।
অন্যের হয়ে জেল খাটা মিনুর মুক্তি
চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমির পরিবর্তে জেল খাটছিলেন মিনু নামে নিরপরাধ এক নারী। মিনুকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ঘটনাটি জানাজানি হলে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ।
পরে এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে ৭ জুন হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ মিনুকে মুক্তির আদেশ দেন। পাশাপাশি মূল আসামি কুলসুমকে দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের তলব করেন আদালত। তবে মুক্তির কিছুদিন পরই গত ৭ জুন এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মিনু। বর্তমানে তার দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ বিষয়ে শুনানি অব্যাহত রয়েছে।
বারের সভাপতি পদ নিয়ে হট্টগোল
সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মরহুম অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু ২০২১-২২ মেয়াদের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ এপ্রিল তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান। পরে ২৬ এপ্রিল সমিতির নবনির্বাচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ৪ মে দুপুরে এক বিশেষ সাধারণ সভা ডাকেন। সভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে সভাপতি ঘোষণা করেন আওয়ামীপন্থিরা। সেই থেকে শুরু হয় সভাপতি পদ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল। যার জেরে ১৫ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জন করেন সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
খালাস পেয়েছেন তুষার দাস, জয় হলো ভালোবাসার
ভালোবাসার টানে ব্রাহ্মণ বাবা-মায়ের ঘর ছেড়ে হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলে শরীয়তপুরের তুষার দাস ওরফে রাজকে বিয়ে করেছিলেন সুস্মিতা দেবনাথ অদিতি। এটাই ছিল তাদের ‘অপরাধ’। নাবালিকা মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ এনে তুষারের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার শাশুড়ি। ওই মামলায় তার ১৪ বছরের সাজা হয়।
২০১৯ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শরীয়তপুরের সুস্মিতা ও তুষার ভালোবেসে বিয়ে করেন প্রায় দুই বছর আগে। এরই মধ্যে তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। কিন্তু এখনো তাদের বিয়ে মেনে নিতে পারেননি সুস্মিতার বাবা-মা। মেয়ে ‘নাবালিকা’ এমন অভিযোগে সুস্মিতার মা অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন তুষারের নামে। ওই মামলায় প্রায় আট মাস জেলও খাটেন তুষার। বিচার শেষে এ মামলায় তুষারকে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।
পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন তুষার। ওই আপিলের শুনানি শেষে গত ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাকে খালাস করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হন তুষার।