সুনামগঞ্জে নদীর পানি কমলেও হাওর অঞ্চল ও পৌর শহরের পাড়া-মহল্লায় বাড়ছে। মঙ্গলবার সকালে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সকাল ৯ টায় বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার বা ২.২৩ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। বুধবার সুরমা নদীর পানি ৪০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও তেমন বৃষ্টি হয়নি। তবে বুধবার ভোর থেকে একটানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুন পাড়া, শান্তিব্গা, ধোপাখালী, বাঁধনপাড়া, বলাকা, মোহাম্মদপুর, ষোলঘর, নবীনগর, কাজীর পয়েন্ট সহ বিভিন্ন এলাকায় পানি বেড়েছে।
এদিকে বন্যার পানি শহরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে সুনামগঞ্জের হাটবাজারগুলোর চিত্র। নিমিষেই বাজারগুলো থেকে উধাও হয়ে গেছে মোমবাতি, চিড়া ও সিলিন্ডার গ্যাস। সেইসঙ্গে ঘণ্টা খানিকের ব্যবধানে দামও যেন হয়ে উঠেছে আকাশছোঁয়া।
বন্যাকবলিত মানুষরা বলেন, বাজারে মোমবাতি, চিড়া ও সিলিন্ডারের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। মানুষের যখন খারাপ অবস্থা তখন সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে শুকনা খাবার ও মোমবাতির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, এটা সত্যি দুঃখজনক।
সরেজমিনে দেখা যায়, একতালা বা কাঁচা ঘরে থাকা মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। গতকাল রাত থেকেই অনেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে তাদের নিরাপদ গন্তব্যে যাচ্ছেন। সকলের চোখে মুখে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার আতংক। তবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। পরিবার পরিজন নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন তারা।
এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় লোকজন।
পাহাড়ি ঢল নেমে আগে থেকেই প্লাবিত ছিল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর, দিরাই, শাল্লা, জামালগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাতক দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সে.মি উপর দিয়ে সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক উপজেলায় বিপৎসীমার ১৪৬ সে.মি উপর দিয়ে সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়াও দিরাই উপজেলায় ১৬ সে.মি উপর দিয়ে সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে ১০০ মি.মি, লাউড়ের গড়ে ৭৮ মি.মি, ছাতকে ৮৪ মি.মি এবং দিরাইয়ে ৭৭ মি.মি বৃষ্টিপাত হয়েছে। নদীর পানি কমলেও বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পানি বাড়তে পারে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশংকা রয়েছে।