সুনামগঞ্জে ডায়মন্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোং এর ডিএমডি প্রতারক তৌহিদ হোসেন বাবুর বিরুদ্ধে ২ হাজার গ্রাহকের সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি থেকে প্রতিকার এবং সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে প্রতারণার শিকার কর্মকর্তা ও গ্রাহকরা।
রোববার (৬ আগস্ট) সকালে শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রথমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর কাছে স্মারকলিপিটি হস্তান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ এর কাছে আরেকটি স্মারকলিপি প্রদান করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এ সময় স্মারকলিপিটিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাহক ও কর্মকর্তারা গণস্বাক্ষর করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা সুনামগঞ্জ জেলার ডায়মন্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স এর কোম্পানিতে ৪০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজ করে আসছি। আমাদের অধীনে অত্র জেলার প্রায় ২ হাজার গ্রাহক সৃষ্টি করে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা গ্রাহকদের নিকট থেকে এনে ডায়মন্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোং সুনামগঞ্জ শাখার ডিএমডি তৌহিদ হোসেন বাবুর কাছে অফিসিয়াল নিয়ম অনুযায়ী হস্তান্তর করি। সে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকায় অধিকাংশ সময়েই বিনা রশিদে আমাদের কাছ থেকে ডায়মন্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির নামে টাকা জমা রেখে আসি, আমরা তার নিম্নতম কর্মকর্তা ও কর্মচারী হওয়ায় সে আমাদের নিকট থেকে প্রায় সময়ই যারা লাইফ ইনস্যুরেন্স করেছেন সেই গ্রাহকদের টাকা বিনা রশিদে গ্রহণ করেছে।
তাছাড়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রমোশন দেওয়ার নামে আমাদের ব্যাংকের হিসাবের খালি চেক ও ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে টাকার অংক না বসিয়ে স্বাক্ষর করে নিয়ে যায়। আমরা সহজ সরল মনে আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে তা প্রদান করি। আমাদের সে বলে যে নিয়োগ কিংবা প্রমোশন পেতে হলে কোম্পানিতে টাকার অংক ছাড়া খালি চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে হবে। কেননা গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা এনে যদি উনার কাছে জমা না দেওয়া হয়, এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে আমাদের চেক থেকে টাকা কর্তন করা হবে। এটা অফিসিয়াল নিয়ম। সে আরও জানায় চেক ও স্ট্যাম্প হেড অফিসে জমা দেওয়া হবে কিন্তু পরবর্তীতে তার কার্যকলাপে আমাদের নিকট প্রমাণ হয় যে সে এতদিন আমাদের সাথে প্রতারণা করে আসছে। এনিয়ে আমরা প্রতিবাদ করলে সে আমাদের মানহানি ও প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেয়।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, আমরা পরস্পর জানতে পারছি যে, সে যেকোনো মূহুর্তে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারে এবং এমতাবস্থায় তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হলেও বর্তমানে সে পলাতক রয়েছে তাই তাকে জরুরী ভিত্তিতে আইনের আওতায় না আনা হলে আমাদের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী হাজারও গ্রাহকের টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। ইতিমধ্যেই আমাদের তিনজন কর্মকর্তা সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় তিনটি জিডি করেছেন, যার নং ১৮৪৮, ১৮৫২, ১৮৫০, তারিখ : ৩০-০৭-২০২৩ ইং।
ডায়মন্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের সাবেক কর্মকর্তা শম্পা বেগম আফেন্দী বলেন, প্রতারক তৌহিদ হোসেন বাবু আমাদের সহজ সরল পেয়ে চাকরির নাম করে বিরাট অঙ্কের প্রতারণা করেছে, সে আমাদের মাধ্যমে গ্রাহকদের ইনস্যুরেন্স করি আজ সে সাড়ে ৩ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তার এই কাণ্ডের জন্য গ্রাহকরা আমাদের চাপ দিয়ে যাচ্ছে টাকার জন্য কিন্তু আমরা টাকা পাব কোথায় সেজন্য আমরাও ঘর থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি এখন সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সে আমাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আমরা নাকি বেশি বাড়াবাড়ি করলে সে আমাদের মেরে ফেলবে তাই আজকে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি আশা করি উনারা আমাদের ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে সহায়তা করবেন।
এদিকে এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ বলেন, স্মারকলিপি পেয়েছি এবং এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ থানায় দিতে বলা হয়েছে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।