দেশে চালের কোনো সংকট বা ঘাটতি নেই। সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এরইমধ্যে বাজারে নতুন চালও আসতে শুরু করেছে। তবুও নানা অজুহাতে বাড়ছে চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। আর পাইকারি বাজারে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা।
এদিন খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৬ টাকা। নাজিরশাইল চাল ৭০ থেকে ৮৫ টাকা, মাঝারি মানের বিআর আটাশ চাল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা এবং মোটা স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা ও হাইব্রিড মোটা ৫০ টাকা। অথচ এক সপ্তাহ আগেও খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৭২ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৬৫ থেকে ৭৮ টাকা, মাঝারি মানের বিআর আটাশ চাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা, মোটা চাল স্বর্ণা ৪৬ টাকা এবং হাইব্রিড মোটা ৪৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী বছর সংকট হতে পারে এই খবরে ভোক্তাদের হঠাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাল ক্রয়, কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর বাজার থেকে চাল ক্রয় এবং উৎপাদন খরচ বেশি- এই তিন অজুহাতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে চালের দাম।
পুরান ঢাকার বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ জানান, বাজারে চালের কোনো সংকট নেই। এরপরও সব ধরনের চালের দাম পাইকারিতে কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোকামে দাম বাড়ায় তারাও বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, বাজারে নতুন চাল আসতে শুরু করেছে। কিন্তু দাম বেশি। কারণ এ বছর আমন ধানের দাম বেশি। সরকার এ বছর ধানের দাম বাড়িয়েছে ফলে সাধারণ কৃষক তো বেশি দামে ধান বিক্রি করছে। যদিও তাদেরও উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এছাড়া বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বেশি চাল কিনে নিচ্ছে। তারপর তারা আরও বেশি দামে প্যাকেটজাত করে বাজারে ছাড়ে। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী বছর সংকট হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। ফলে মানুষ হুজুগে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে, হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। এজন্য কর্পোরেট কোম্পানিগুলোকে সরাসরি কৃষকদের থেকে ধান নিতে হবে, সরকারের মনিটরিং বাড়াতে হবে।
বাবুবাজারের হাজী রাইস এজেন্সির মালিক জিয়াউল হক বলেন, গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী আগামী বছর সংকট হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে সবাইকে সতর্ক হতে বলেছেন। এরপর থেকেই হঠাৎ সাধারণ মানুষের মধ্যে চাল কেনার প্রবণতা বেড়ে গেছে। হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় দামও একটু বেড়েছে। সব ধরনের চালের দাম ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে মোটা চালের দাম একটু বেশি বেড়েছে।
বাদামতলি ঘাটের চাল বিক্রেতা মো. কাউসার বলেন, মানুষের মধ্যে খাদ্যসংকটের যে ভয় কাজ করছে, সেটা দূর করতে প্রচার বাড়াতে হবে। এ ছাড়া নতুন ধান যখন ওঠে তখন কিছু মৌসুমি বা অসাধু ব্যবসায়ী দেখা যায়। তাদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। তাহলে বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের মোকামমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে চালের কোনো সংকট বা ঘাটতি নেই। বাজারে বর্তমানে বিক্রি হওয়া চাল প্রায় ছয়-সাত মাস আগের। মজুদও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমন চালও বাজারে চলে আসছে। তবে সরবরাহ আরও বাড়লেও দাম খুব একটা কমবে না।
নওগাঁ জেলা ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, আগামী বোরো মৌসুমে উৎপাদন ভালো হলে দেশে ধান-চালের সংকট হবে না। বর্তমানে আমন ধানের দাম বেশি, উৎপাদন খরচও বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে চালের দাম বেশি।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, চালের সংকট নেই। বাজারে নতুন চাল আসছে। তবে চালের সংকট না থাকলেও অসৎ ব্যবসায়ীর সংকট নেই। নাই নাই শব্দের কারণে দাম বাড়ছে। এ ছাড়া অনেকেই চাহিদার চেয়ে বেশি চাল কিনছে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, দেশে দুর্ভিক্ষ আসবে না। ধান-চালের কোনো সংকট হবে না।
তিনি বলেন, দেশে প্রচুর খাদ্য রয়েছে। আমাদের দেশের মাটি সোনার চেয়ে খাঁটি। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে সরকার অনেক কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। কেবলমাত্র কৃষকদের সার প্রদানের ক্ষেত্রেই ৪৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার।