ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিদেশ ভ্রমণে পছন্দের শীর্ষে ভারত-সৌদি, দেশের মধ্যে কক্সবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩৯:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

শুধু কেনাকাটার উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমান দেশের ১৬ শতাংশ পর্যটক। তাদের ভ্রমণ করা দেশের মধ্যে পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ভারত ও সৌদি আরব। অন্যদিকে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণে যান। সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ পর্যটক বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে পছন্দ করেন। বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন ৫৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ মানুষ।

এছাড়া স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বিদেশে পাড়ি জমান। বিদেশগামী পর্যটকরা সর্বাধিক ব্যয় করেন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাখাতে- ২৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ, তারপর পরিবহনে ২৫ দশমিক ২৮ শতাংশ ও কেনাকাটায় ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট’ শীর্ষক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপের ফল প্রকাশ করেছে বিবিএস।

জরিপে দেখা যায়, দেশের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট খানার (পরিবার) ৪৪ দশমিক ৩০ শতাংশ কমপক্ষে একটি একদিনের ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন। রাত্রিযাপনসহ কমপক্ষে একটি ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন মোট খানার প্রায় ৬৪ দশমিক ১৪ শতাংশ পর্যটক। একদিনের ভ্রমণে গড়ে ২ দশমিক ৭২ জন ও রাত্রিযাপনসহ ভ্রমণে গড়ে ২ দশমিক ৪৩ জন পর্যটক ঘুরে বেড়িয়েছেন। একদিনের ভ্রমণ ও রাত্রিযাপনসহ ভ্রমণ একত্রে বিবেচনায় নিলে প্রতি যাত্রায় গড় ভ্রমণকারীর সংখ্যা ছিল ২ দশমিক ৫৬ জন।

রাত্রিযাপনসহ ভ্রমণের গড় সময় ছিল ৩ দশমিক ৪৩ রাত। একদিনের ভ্রমণে পর্যটকের মধ্যে সর্বাধিক ৪১ দশমিক ২৬ শতাংশ সংখ্যক পর্যটক বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করেছেন। অন্যদিকে মোট পর্যটকের প্রায় ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সেবার জন্য ভ্রমণ করেছেন। আর ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন কেনাকাটার জন্য।

রাত্রিযাপনকারী পর্যটকের মধ্যে সর্বাধিক ৭৬ দশমিক ৭০ শতাংশ পর্যটক বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে ভ্রমণ করেছেন। অন্যদিকে মোট পর্যটকের প্রায় ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার জন্য ভ্রমণ করেছেন এবং ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন ছুটি, অবসর ও বিনোদনের জন্য।

রাত্রিযাপনকারী পর্যটকদের মধ্যে ৫২ শতাংশ পর্যটক পরিবহনের প্রধান বাহন হিসেবে বাস ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ ভ্রমণকারী ভ্রমণের জন্য পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ভাড়া গাড়ি ব্যবহার করেছেন। পাশাপাশি পরিবহনের জন্য সবচেয়ে কম সংখ্যক পর্যটক আকাশপথ ব্যবহার করেছেন, মাত্র ০ দশমিক ২৮ শতাংশ।

ভ্রমণে এগিয়ে সিলেটিরা, পছন্দের সময় ডিসেম্বর

একদিনের ভ্রমণে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ পর্যটক ডিসেম্বর মাসে ভ্রমণ করেছেন। তারপর আগস্ট মাসে ১০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ পর্যটক ঘুরে বেড়িয়েছেন। অন্যদিকে নভেম্বর মাসে একদিনের দেশীয় ভ্রমণের হার ছিল সর্বনিম্ন, ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। ভ্রমণের জন্য ডিসেম্বর মাস পর্যটকদের বেশি পছন্দ। কারণ এ মাসে পরিবেশ ও আবহাওয়া বেশি ভ্রমণ অনুকূলে থাকে। এছাড়া বন্ধ থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।

অঞ্চলভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, দেশ-বিদেশে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করেন সিলেট বিভাগের মানুষ। এই বিভাগের ১৭ শতাংশ খানার মানুষ ভ্রমণ করেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ মানুষ ভ্রমণ করেন রাজশাহী বিভাগের। তৃতীয় অবস্থানে আছে ঢাকা, যেখানকার ১৪ শতাংশ মানুষ ভ্রমণে বের হন। আর ভ্রমণে সবচেয়ে পিছিয়ে ময়মনসিংহের মানুষ, সেখানকার মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ ভ্রমণ করেন।

সরকারি সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে পর্যটকের সংখ্যা ও ভ্রমণ ব্যয়ের পরিমাণ জানা এবং মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটনখাতের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই জরিপ চালানো হয়। দেশে করোনা সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার ঠিক আগে গত বছরের মার্চ মাসে জরিপের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যারা বাইরে কোথাও ঘুরতে গিয়ে এক রাতের বেশি সময় কাটিয়েছেন, তাদেরই জরিপে পর্যটক হিসেবে বিবেচনা করেছে বিবিএস।

এই জরিপের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক তোফায়েল আহমেদ বলেন, জিডিপিতে পর্যটনখাতের অবদান কম নয়। জরিপ না করলে আমরা এটা জানতে পারতাম না। জিডিপিতে এখন পর্যটন খাতের অবদান ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকা। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, মানুষের আয় বাড়ছে ফলে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, এর আগে একবার পাইলটভাবে জরিপ করা হয়। তবে বলা যায় পর্যটন নিয়ে এটাই পূর্ণাঙ্গ জরিপ।

পছন্দের শীর্ষে ভারত, উদ্দেশ্য চিকিৎসা

৬০ শতাংশ মানুষ বিদেশ ভ্রমণে ভারতকে বেছে নিয়েছেন। মোট ৩৯ হাজার ৪১৪ হাজার খানার মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ হাজার ১৬৭ হাজার বা ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ খানা কমপক্ষে একবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। গড়ে প্রতিটি যাত্রায় ভ্রমণ করেছেন ১ দশমিক ৮৭ জন। ভ্রমণের গড় সময়কাল ছিল ৫ দশমিক ৭৬ রাত। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বাধিক সংখ্যক বা ৬০ দশমিক ৪১ শতাংশ বাংলাদেশি ভারতকে বিদেশ ভ্রমণের প্রধান গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব (৮ দশমিক ১২ শতাংশ) ও মালয়েশিয়া ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের মধ্যে সর্বাধিক ৪৫ দশমিক ১১ শতাংশ পর্যটক বিদেশ ভ্রমণ করেছেন আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের জন্য। বিদেশগামী বাংলাদেশিদের মধ্যে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ও ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ ছুটি, অবসর ও বিনোদনের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। বিদেশগামী পর্যটকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক (৪৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ) তাদের বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে অবস্থান করেছেন। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, বিদেশে ভ্রমণকারী পর্যটকদের অবস্থানের জন্য বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি গুরুত্বপূর্ণ।

বহির্গামী পর্যটকদের বেশিরভাগ (৪৮ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ) ভ্রমণের জন্য পরিবহনের প্রধান বাহন হিসেবে বাস বেছে নিয়েছেন। অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক (১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ) বহির্গামী পর্যটক ভ্রমণে ব্যবহার করেছেন রেলপথ। এছাড়া পর্যটকদের মধ্যে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ ভ্রমণে পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে আকাশপথ বেছে নিয়েছেন। ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশি বিদেশে ভ্রমণ সম্পন্ন হয়েছে। এরপর রয়েছে এপ্রিল ও জানুয়ারি।

বিদেশ ভ্রমণে শীর্ষে ঢাকা বিভাগ, সর্বনিম্ন ময়মনসিংহে

সবচেয়ে বেশি মানুষ বিদেশে ভ্রমণ করেছেন ঢাকা বিভাগ থেকে, ২৫ শতাংশ। তারপরই খুলনা বিভাগ ১৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ ও সিলেট বিভাগে ১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অন্যদিকে ময়মনসিংহ বিভাগে বহির্গামী পর্যটকের সংখ্যা সর্বনিম্ন, মাত্র শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ। বিদেশে মোট পর্যটন ব্যয় ৩৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা; যার মধ্যে প্রাক-যাত্রায় ব্যয় হয়েছে (বহির্গামী ভ্রমণে দেশীয় ব্যয়) ৭ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা।

বিবিএস দৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের মোট পাঁচ হাজার খানার ওপর জরিপটি চালিয়েছে। এর মধ্যে শহরাঞ্চলের ২ হাজার ৩৯০টি খানা ও গ্রামাঞ্চলের ২ হাজার ৬১০টি খানা বাছাই করা হয়।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ত) মো. মাহমুদ কবীর বলেন, মানুষের হাতে টাকা আছে, ভ্রমণ করারও প্রবণতা বেশি। পর্যটনের উন্নয়নে আমরা নতুন নতুন প্রকল্প নিচ্ছি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে এ বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারসহ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্রের জন্য। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে এ খাত আরও প্রসারিত হবে।