ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
চুনারুঘাটে সবজির আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ১‘শত ৮০ হেক্টর এং লাউ আবাদ হয়েছে ৮৫ হেক্টর জমিতে

বিষমুক্ত লাউ চাষে সফল ইদ্রিস আলী, বাড়ছে অন্য চাষীদেরও আগ্রহ

এম এস জিলানী আখনজী, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:১৮:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

চতুর্থ ফসল লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ ইউনিয়নের কালিচুং গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী। তার বাড়ি সংলগ্নে ৩৬ শতাংশ পতিত জমিতে দেশীয় পদ্ধতিতে ‘সুলতানা’ জাতের লাউ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তিনি। লম্বা লাউ চাষ করে বীজ বপনের ৫০ থেকে ৫৫ দিনের মধ্যে তিনি ভালো ফলন পেয়ে খুশি।

ইদ্রিস আলী লাউ চাষে জৈব সারের সঙ্গে সামান্য পরিমান রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছেন। তার এ সফলতা দেখে অন্য সবজি চাষিরাও লাউ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এর আগেও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে লাউ চাষে বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন বলে জানান কৃষক ইদ্রিস আলী।

সরেজমিন দেখা যায়, কৃষক ইদ্রিস আলী বিষ প্রয়োগ ছাড়াই এক বিঘা জমিতে দেশীয় পদ্ধতিতে মাচায় ‘সুলতানা’ জাতের লাউ চাষ করেছেন। তার লাউ ক্ষেতে মাচার নিচে ঝুলছে ছোট-বড় শত শত সবুজ লাউ। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। এ লাউ চাষাবাদে এবার তার খরচ হয়েছে বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বিষমুক্ত লাউ চাষের কারণে বাজারে তার লাউয়ের ব্যাপক চাহিদাও ছিল। বর্তমানে উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের অন্যান্য কৃষকরাও তার দেখাদেখি লাউ চাষের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

কৃষক ইদ্রিস আলী আরও জানান, অল্প শ্রম ও সীমিত পুঁজিতে লাউ চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। সপ্তাহে দুইদিন এই ক্ষেত থেকে লাউ কেটে বিক্রি করেন তিনি। এ বছর শুরু থেকে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা মূল্যের লাউ বিক্রি করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পাশাপাশি ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে এই ক্ষেত থেকে আরও ২ থেকে হাড়াই হাজার লাউ উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে তিনি ধারনা করছেন। গড়ে প্রতিটি লাউ ২৫ টাকা দরে বিক্রি করলেও আরও ৫০ হাজার টাকা ঘওে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। তিনি আগামীতে আরও বড় পরিসরে লাউয়ের পাশাপাশি বিষমুক্ত ও নিরাপদ অন্যান্য সবজি চাষ করতে চান বলেও জানান। 

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন- কৃষক ইদ্রিস আলী লাউ চাষাবাদে যাথেষ্ঠ আগ্রহী। তার আগে তিনি একই জমিতে তরমুজ, চিচিংগা, তিত করলা, লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছে। তিনি বিভিন্ন সময়ে উচ্চমূল্যের সবজি আবাদ করে থাকেন, যার কারণে তিনি সফলতার সঙ্গে লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মাহিদুল ইসলাম বলেন- “চুনারুঘাট উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে মোট সবজির আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ১‘শত ৮০ হেক্টর জমি। এরমধ্যে লাউ আবাদ হয়েছে ৮৫ হেক্টর জমি। উপজেলার প্রত্যেকটা ইউনিয়নেই সবজি আবাদের জন্য যতেষ্ট আবাদী জমি রয়েছে এবং কৃষকরা সবসময় কৃষি অফিসের পরামর্শ মতো তারা সবজি আবাদ করছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী আকারে মাচায় সবজি চাষ ও লাউয়ের প্রদর্শনী কৃষকদেরকে দিয়েছি। এবং কৃষক ইদ্রিছ আলী ৩৬ শতাংশ জমিতে লাউ আবাদ করেছিলেন। এবং প্রত্যেকটা ধাপেই তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে লাউ আবাদ করেছেন। তিনি পরিবেশবান্ধব উপায়ে সেক্স ফেরোমন ফাদ, হলুদ ফাঁদ এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে লাউ উৎপাদন করছেন। শুধু ইদ্রিস আলী‘ই নয় চুনারুঘাট উপজেলার অধিকাংশ কৃষকরাই কৃষি অফিসের পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করছেন। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মালচিং এবং দেশীয় পদ্ধতিতে লাউ চাষাবাদ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এ পদ্ধতিতে লাউ উৎপাদনে সাধারণত অন্যান্য ফসলের তুলনায় পরিশ্রম কম ও ফলন ভালো হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে লাউ উৎপাদন করে সফলতা পেয়েছে লাউ চাষি কৃষক ইদ্রিছ আলী।