ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ডিবিসি ব্যারেজ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে ভাসছে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, বীরভূমসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল। রাজ্যটির ছয় জেলায় পানি বিপৎসীমার এতটাই উপর দিয়ে বইছে যে, জেলাগুলোর একতলা বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
এসব জেলায় উঁচু জায়গা এখন নেই বললেই চলে।
প্রাণ বাঁচাতে গ্রামবাসী ভাসছে বাঁশ-কাঠ ধরে, এমন দৃশ্য দেখে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে কথা বলেছেন দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের (ডিভিসি) প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে। কথা বলেছেন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গেও। কিন্তু সেখান থেকে বার্তা এসেছে, প্রবল পানির চাপে লকগেট খুলে না দিলে বড়সড় ক্ষতি হতো ব্যারেজের। পানি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় ছিল না।
কিন্তু সেই ব্যারেজ খুলে দিতে বিপদে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গবাসী। এর জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ডিবিসির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দেবেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টম্বর) রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে ডিভিসি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
একাধিক এলাকা ঘুরে দেখার পর তিনি জানান, ডিভিসির সঙ্গে আগামী দিনে সম্পর্ক রাখবেন না। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার গোটা বিষয়টি নিয়ে কেন উদাসীন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এই বন্যাকে ‘ম্যান মেইড’ বন্যা বলে আক্রমণ শানিয়েছেন। তার দাবি, পূজার আগে পরিকল্পিতভাবে পানি ছেড়ে বাংলাকে ডোবাচ্ছে ডিভিসি।
মমতার বলেন, রাজ্যকে (পশ্চিমবঙ্গ) বিপদে ফেলতে ইচ্ছাকৃতভাবে এসব করা হচ্ছে। আর গোটা বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার উদাসীন। বন্যার জন্য দায়ী ডিভিসি। ঝাড়খণ্ডকে বাঁচাতে পরিকল্পিতভাবে বাংলাকে ডোবাচ্ছে কেন্দ্র সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী আরও দাবি করেছেন, ডিভিসির জলধারণ ক্ষমতা আগের থেকে ৩৬ শতাংশ কমে গেছে। ড্রেজিং না করার জন্যই এমন হয়েছে। আর কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয় না।
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি এবং মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ছাড়া পানির ফলে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বর্ধমানসহ দক্ষিণবঙ্গের বহু জেলায় নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
মমতা ডিভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, ৫ লাখ কিউসেকের বেশি পানি ছাড়া হয়েছে। আগে একসাথে এত পানি ছাড়া হয়নি। ভুটান থেকে পানি ছাড়ার কারণে উত্তরবঙ্গ ভেসে যায়, এখন আবার ঝাড়খণ্ডকে বাঁচাতে বাংলাকে ডোবানোর চেষ্টা হচ্ছে।
প্রতিবেশী রাজ্য ও ডিবিসির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন উল্লেখ করে পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জানান, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের বর্ডার সিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ কারণে বাংলায় আগামী দিনে পেঁয়াজসহ একাধিক নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে চলেছে।