ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস ৮ ডিসেম্বর

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৩১:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

৮ ডিসেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এই দিনে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী সদস্যরা বীরদর্পে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রবেশ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে মুক্ত ঘোষণা করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে উড্ডীন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

 

জানা গেছে, একাত্তরের ৩০ নভেম্বর থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধের তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া শত্রুমুক্ত করতে পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় মিত্রবাহিনী পাক বাহিনীর ওপর বেপরোয়া আক্রমণ চালাতে থাকে। পরদিন ১ ডিসেম্বর আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় সংঘটিত প্রচণ্ড যুদ্ধে নিহত হয় ২০ হানাদার। দু'দিন পর ৩ ডিসেম্বর আখাউড়ার আজমপুরের যুদ্ধে নিহত হয় পাকিস্তানি ১১ হানাদার এবং শহীদ হন তিনজন মুক্তিযোদ্ধা। পরদিন ৪ ডিসেম্বর হানাদাররা পিছু হটতে থাকলে আখাউড়া অনেকটাই শত্রুমুক্ত হয়। আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের তুমুল যুদ্ধে পাক বাহিনীর দু’শতাধিক সেনা হতাহত হয়। এর দু'দিন পর ৬ ডিসেম্বর আখাউড়া সম্পূর্ণভাবে হানাদার মুক্ত হয়। আখাউড়া মুক্ত হবার পরই ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে হানাদারমুুক্ত করার প্রস্তুতি চলতে থাকে। মুক্তি বাহিনীর একটি অংশ শহরের দক্ষিণ দিক থেকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে এবং মিত্র বাহিনীর ৫৭তম মাউন্টের ডিভিশন আখাউড়া-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেললাইন ও উজানীসার সড়ক দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। সেসময় শহরের চতুর্দিকে মুক্তিবাহিনী শক্ত অবস্থানে থাকায় খান সেনারা পালাবার সময় ৬ ডিসেম্বর রাজাকারদের সহায়তায় চালায় নির্মম-পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড।ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের তদানীন্তন অধ্যাপক কে.এম লুৎফুর রহমানসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে আটকে রাখা অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে চোখ বেঁধে শহরের দক্ষিণ প্রান্তের কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এছাড়া শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা কলেজের হোস্টেল, অন্নদা স্কুল বোর্ডিং, বাজার ও গুদামসহ বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরদিন ৭ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে পাকিস্তানি হানাদাররা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে পালাতে থাকে। ফলে ৮ ডিসেম্বর অনেকটা বিনা বাধায় বীর মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রবেশ করে। সকাল ৯ টার দিকে মুক্তিযুদ্ধের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জহুর আহমেদ চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সেই থেকে ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এদিকে একই দিন সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পার্শ্ববর্তী সরাইল উপজেলাও হানাদার মুক্ত হয়। 

 

 

এদিকে প্রতিবারের ন্যায় এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস পালনের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। গৃহিত কর্মসূচি মোতাবেক ৮ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ১০ টায় শহরের নিয়াজ পার্কস্থ মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত থাকবেন।