ঢাকা, রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১

বড়লেখায় আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

বড়লেখা প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৯ জুন ২০২৪ ০৫:৪৫:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

মৌলভীবাজারের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হাওরের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। এছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাঠে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

 

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২২ টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে ৯টি কেদ্রে ১০৩ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে  টানা বৃষ্টিতে টিলা ধ্বসে পড়ার আশঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশ ঝুঁকি নিয়ে বসবসাকারী পরিবারকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, গত দুদিন থেকে বড়লেখায় টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বড়লেখা পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাঠে পানি ঢুকেছে। এছাড়া বড়লেখা-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে পানি যান চলাচলা ব্যাহত হয়। মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরেছে। ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে উপজেলার তালিমপুর, বর্ণি, সুজানগর, দাসেরবাজার, উত্তর শাহবাজরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে পানি উঠেছে। এতে শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘরে ঠিকতে না পেরে অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

 

বর্ণি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন মঙ্গলবার বিকালে বলেন, আমার পুরো ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত। বড়লেখা সদরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। আমার ইউনিয়নের মানুষের জীবন প্রায়ই অচল। প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্ধি রয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এরইমধ্যে  আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫-২০ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। সরকারিভাবে এখনও কোনো খাদ্যসহায়তা মেলেনি। তবে আমরা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। তবে পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে জানান তিনি।

 

দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি ঢুকেছে। এরমধ্যে ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। সবমিলিয়ে ১ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিনি সায়পুর আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, এই কেন্দ্রে ১২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারগুলোকে আমরা খিচুড়ি রান্না করে খাইয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে। তবে রাস্তাঘাটে পানি থাকায় সড়ক যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া পাদদেশ ঝুঁকি নিয়ে বসবসাকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।

 

তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান এখলাছ উদ্দিন বলেন, তার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকেছে। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ঢলের পানিতে ১৭৪ হেক্টর আউশ ধান এবং ৭ হেক্টর গ্রীস্মকালীন শাক-সবজি নিমজ্জিত রয়েছে। পানি আরও বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।  

 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান বলেন, আমরা বন্যার্ত পরিবারের তথ্য সংগ্রহের জন্য কাজ করছি। এসব পরিবারের এখনও সহায়তায় দেওয়া হয়নি। আমরা ঊর্ধ্বতনের কর্তৃপক্ষের নিকট শুকনো খাবারের চাহিদা পাঠিয়েছি। খাবার পাওয়া গেলে তা দুর্গত পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণ করা হবে।

 

বড়লেখা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শামীম মোল্লা বলেন, চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের পানিধার এলাকায় গতকাল সোমবার পানিতে নিমজ্জিত ছিল। তবে পানি নেমে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজরাতুন নাঈম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকায়বেলায় আমরা সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতিমধ্যে  ২২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে ৯টি কেন্দ্রে ১০৩ টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের মাঝে খাবার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শুকনো খাবারও পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ের পাদদেশে যেসব পরিবার বসবাস করছে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সেরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।