মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় আল্লাদাত চা বাগান কর্তৃক বেরেঙ্গা খাসিয়াপুঞ্জির চারটি পানজুমের ৩ হাজার পান গাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলার প্রতিবাদে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রোববার বেলা আড়াইটায় উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর বাজারের বড়লেখা ইন্ডিজিনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরামের ব্যানারে বীর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
এতে বেরেঙ্গা খাসিয়াপুঞ্জির বাসিন্দাসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দুই শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে স্থানীয় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ, বড়লেখা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সংহতি জানান। এ ঘটনায় উদ্বেগ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তাঁরা।
মানববন্ধন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ক্ষতিগ্রস্ত পানজুমের মালিক অলমি খাসিয়া। বড়লেখা ইন্ডিজেনিয়াস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ শর্মার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ, বড়লেখা প্রেসক্লাবের সভাপতি অসিত রঞ্জন দাস, ইউপি সদস্য ইসলাম উদ্দিন মন্টু, নান্টু মারা, রাজেশ পস্না, ইন্ডিজেনিয়াস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরামের প্রচার সম্পাদক পাইলট মারলিয়া, শিক্ষার্থী স্টেফানিয়া চেল্লা, সন্তোষ পতাম, ওলমি খাসিয়া, মেলেট খাসিয়া প্রমুখ।
মানববন্ধনে বড়লেখা ইন্ডিজেনিয়াস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ শর্মা বলেন, ‘পান ও সুপারি গাছ কাটার পর আমরা থানায় অভিযোগ দেই। এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পান শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ। কিন্তু তিনি আমাদের অসহযোগিতা করছেন। দায়সারা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষি অলমি খাসিয়া বলেন, ‘আমরা অসহায় হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছি। বাগান আমাদের পান ও সুপারি গাছ কেটে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে। লোন নিয়ে আমরা জুম করেছিলাম। আমাদের হুমকিও দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি জানাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তা যেন পাই।’
উত্তর শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘খাসিয়ারা শান্তিপ্রিয়। তাদের জুমের পান ও সুপারি গাছ কাটা চরম অন্যায় হয়েছে। এরকম ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে একের পর এক ঘটনা বাড়বে। এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি আমরা সকলেই।’
বড়লেখা প্রেসক্লাবের সভাপতি অসিত রঞ্জন দাস বলেন, ‘পান ও সুপারি গাছ কাটায় খাসিয়ারা জীবিকা হারানোর আশঙ্কা করছেন। এ ঘটনায় দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই।’
অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল হক বলেন, ‘এখানে অধর্তব্য অপরাধ হয়েছে। তাই দন্ডবিধির ৪২৭ ও ৫০৬ ধারায় নন এফআইআর প্রসিকিউসন দাখিলের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়েছি।’
মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি সুবিমল লিন্দকিরি বলেন, ‘বেরেঙ্গা খাসিয়াপুঞ্জির চারটি পানজুমের গাছ কাটার ঘটনায় এফআইআর নেওয়ার মতো যথেষ্ট উপদান রয়েছে। কিন্তু মামলা না নিয়ে নন এফআইআর প্রসিকিউসন দাখিলের অনুমতি চাওয়াটা রহস্যজনক।’
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (০৮ মে) আল্লাদাত চা বাগান কর্তৃক বেরেঙ্গা খাসিয়াপুঞ্জির পান ও সুপারি গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় পানচাষি অলমি খাসিয়া চা বাগানের ম্যানেজার সিরাজ উদ্দিন, পাহারাদার নূর উদ্দিন ও আব্দুস সামাদের নামোল্লেখ ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা রেখে বড়লেখা থানায় লিখিত একটি অভিযোগ করেন।