ভালো সরকার থাকলে হয়তো আমরা পদ্মাসেতু অনেক কম ব্যয়ে করতে পারতাম, প্রধান উপদেষ্টার ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহন করে পদ্মা সেতুর এই নির্মান ব্যয় সংকোচন করা হয়েছে। আর এই ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহন করে সেতু নির্মানে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করা হয়েছে বলে গনমাধ্যমকর্মিদের জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। পদ্মা সেতু পরিদর্শনে এসে শুক্রবার সন্ধ্যায় পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের সার্ভিস এরিয়া ২ এ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান তিনি।
এই সময় তিনি জানান, আমি আনন্দের সাথে জানাচ্ছি পদ্মা সেতু প্রকল্পে সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় ছিলো ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে এখন চুড়ান্ত ব্যয় দাড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এখানে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
সাশ্রয়কৃত টাকার বিবরণ হচ্ছে মূল সেতুতে ৫৩০ কোটি টাকা, নদীশাসনে ৮০ কোটি টাকা, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়াতে ১৭৮ কোটি টাকা। মুল্য সংকোচন ( প্রাইস কন্টিজেন্সি) ৫০০ কোটি টাকা, ভূমি অধিগ্রহণ ১০৩ কোটি টাকা, পরামর্শক ২০০ কোটি টাকা ও অন্যান্য ২৪৪ কোটি। এটা থেকে আপনারা যা বুঝতে পারেন আমাদের এখানে যদি ভালো সরকার থাকতো তাহলে হয়তো আমরা পদ্মাসেতু অনেক কম ব্যয়ে করতে পারতাম।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছিলেন সকল ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোর জন্য। আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় গুলোতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সকল ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে আনবো। একই কাজ কিন্তু কমমূল্যে করবো। এর ফলে হবে একই টাকা দিয়ে আমরা বেশি পরিমাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবো। সেতু বিভাগের সচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো পদ্মা সেতুতে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহন করতে। আমরা ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহন করে পদ্মা সেতুর নির্মান ব্যয় সাশ্রয় করেছি।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ব্যয় সংকোচন করতে, মানে ব্যয় কমানো । দীর্ঘদিন আন্দলোন হয়েছে, বেশ কিছুদিন অফিস আদালত বন্ধ ছিলো, ফলে কলকারখানা চলেনি, ফলে রাজস্ব আদায় হয়নি আশানুরূপ ভাবে। জিডিবির গ্রোথ না বাড়িয়ে পার কেপিট্যাল ইনকামের সংখ্যা না বাড়িয়ে আমরা প্রকৃত উন্নয়নে নিতে চাই। আমাদের মূল ফোকাস প্রকৃত উন্নয়ন। জিডিবির গ্রোথ পার কেপিট্যাল এগুলো হবে। কিন্তু আমরা নিশ্চিত করবো মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন যাতে হয়। মানুষ যাতে বিদ্যুৎ পায়,সেবা পায়।আমরা বড় প্রকল্প থেকে টাকা সাশ্রয় করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়ন করতে চাই।
তিনি এও বলেন, খুলনার রুপসায় ৮৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্যাস সরবরাহ নাই। উন্নয়ন দেখানো হয়েছে। বিভ্রান্ত করা হয়েছে। জিডিবি বাড়ছে। গ্রোথ বাড়ছে। কিন্তু এ গ্রোথ তো কাজের না। যদি বিদ্যুৎ না থাকে তাহলে তো এ গ্রোথ একটা সংখ্যা মাত্র । আমি রুপসা যাচ্ছি ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কি করা যায় সেটা দেখবো। এ প্রকল্পে বিরাট খরচ, ৮৮০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট ১২০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প। এটা তো বিপুল ব্যয়। বাংলাদেশের জনগনকে এটা পরিশোধ করতে হবে। এডিবির ঋনে করা এ প্রকল্প। এখন কি করা যায় সেটা দেখতে হবে।
এর আগে উপদেষ্টা শুক্রবার বিকালে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সার্ভিস এরিয়া ১ ও পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজা পরিদর্শন করেন। এরপর সন্ধ্যায় তিনি খুলনার উদ্দেশ্য জাজিরা ত্যাগ করেন। এ সময় তার সাথে সেতু বিভাগের সচিব মঞ্জুর হোসেন, জালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব নুরুল আমীন ও বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবীবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।