ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। তার আগেই জোট মহাজোটের হিসাব মেলাতে চায় আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে জোট-মহাজোটের মধ্যে যেসব মান-অভিমান রয়েছে সেগুলোরও অবসান করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। এর পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের বাইরে থাকা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নিয়ে জোটকে আরও সম্প্রসারণের উপর নজর দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যে সব দল স্বাধীনতা যুদ্ধ ও অসম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী তাদের জোটে যুক্ত করতে চায় আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে গত দুই নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করেও এবার অন্য জোটের দিকে ঝুঁকতে চায় তাদের নিয়ে বেশি আগ্রহ নেই ক্ষমতাসীন দলের। তারা মনে করে কাউকে জোর করে জোটে রাখা সমীচিন হবে না।
বিশেষ করে সম্প্রতিকালে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আর জোট নয়। এবার জাতীয় পার্টি ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়। তা ছাড়া দলটির চেয়ারম্যান সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বিএনপি জোটের দিকে ভিড়ছেন বলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে রিপোর্ট রয়েছে।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে এবং নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে ধরে রোডম্যাপ ঠিক করতে চায় আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে শুধু ১৪ দলীয় জোট নয় ইসলামি দলগুলোর দিকেও নজর আওয়ামী লীগের। ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যেসব দল স্বাধীনতা যুদ্ধকে মনে প্রাণে ধারণ করে তাদের সঙ্গেও জোট হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে অবশ্যই তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে।
নির্বাচনের আগে জোট নিয়ে অনেক কিছুই ঘটতে পারে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা মনে করেন বর্তমানে জাতীয় পার্টি কিছুটা দোটানায় থাকলেও নির্বাচনের আগে হয়ত আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে। তা ছাড়া ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের মনের ক্ষোভ দূর করে কীভাবে দূরত্ব কমিয়ে আনা যায় সেজন্য ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
জোটের অন্যান্য দলের সঙ্গে ঘন ঘন বৈঠক করে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে দূরত্ব কমিয়ে সক্রিয় হতে শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।
তা ছাড়া আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করেন বিএনপি যদি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে না আসে তাহলে দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশ যেন ভোটে অংশগ্রহণ করে সেজন্য কিছুটা হলেও শিথিল হতে রাজী ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে এটা জোড় আলোচনা রয়েছে।
জোট মহাজোটের হিসেব নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জিএম কাদের সাহেব কোন জোটে যোগ দেবেন, সেটা তাদের ব্যাপার, এটা তাদের দলের এবং তার নিজের সিদ্ধান্ত। আমরা জোর করে আমাদের সঙ্গে রাখব না। অন্য কোনো জোটে যেতে চাইলে, যাবেন। জোট তো হবেই।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জোট সম্প্রসারণ হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘নির্বাচনী জোট করার ব্যাপারে আমাদের মতামত সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা আছে। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের দুয়ার সব সময় সবার জন্য খোলা। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে, স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী, যারা স্বাধীনতার মূল স্থপতি বা স্বাধীনতার মূল নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আস্থাশীল বা যারা তাকে স্বীকার করে মানে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এরকম কোনো রাজনৈতিক দল যদি আওয়ামী লীগের জোটে আসতে চায় অবশ্যই আসতে পারে। সেক্ষেত্রে আলোচনার পথ আমাদের সুগম আছে। দুয়ার খোলা আছে।’
আওয়ামী লীগের টার্গেট ভোটের আগেই জোটের সমীকরণ মিলিয়ে নিশ্চিত জয়ের জন্য মাঠে নামা। সেজন্য দলের ২৩তম জাতীয় কাউন্সিলের পরই জোট সম্প্রসারণ নিয়ে আগাতে চায় দলটি। দলের একাধিক সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরইমধ্যে জোটের নেতাদের সঙ্গে বসতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা।