ঢাকা, রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যরাতে উত্তাল সিলেট, ইটপাটকেল-ফাঁকা গুলি, মিছিল

সিলেট ব্যুরো: | প্রকাশের সময় : সোমবার ৭ অগাস্ট ২০২৩ ১০:৫৫:০০ পূর্বাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

সিলেটে পবিত্র কুরআন শরিফ পুড়ানোর অভিযোগ তুলে মধ্যরাতে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। এ অভিযোগে সিলেট মহানগরের আখালিয়ার ধানুপাড়াস্থ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যানকে মারধর করেন স্থানীয়রা। এর জের ধরে রাত ২টা পর্যন্ত উত্তাল ছিলো এ এলাকা। এসময়  ফাঁকা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ ও র‍্যাব।

রবিবার (৬ আগস্ট) রাত  ১১টার দিকে হঠাৎ উত্তাল হয়ে পড়ে সিলেট মহানগরের আখালিয়া এলাকা। আখালিয়ার ধানুপাড়াস্থ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআন শরিফ পুড়ানোর অভিযোগ তুলে তাদের দুজনকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারধর করেন স্থানীয় জনতা। এসময় তারা দুজন অনেকগুলো পবিত্র কুরআন পুড়িয়েছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ উত্তেজিত হয়ে আইডিয়াল স্কুলের ফটকে জড়ো হয়ে তাদের পিটিয়ে ও পুড়িয়ে মারার হুমকি দিতে থাকেন।  

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যানকে প্রতিষ্ঠানটির একটি কক্ষে আটকে করে ক্ষুব্দ জনতার হাত থেকে রক্ষা করে। এসময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।

সময় যত বাড়তে থাকে পরিস্থিতি তত উত্তপ্ত হয়। রাত ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিশেষ টিম সিআরটি এবং জালালাবাদ ও  কোতোয়ালি থানার অতিরিক্ত পুলিশ এবং র‍্যাব-৯ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

এসময় উত্তেজিনত জনতার একাংশ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।  

রাত সাড়ে ১২টার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাধ্য হয়ে ফাঁকা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। পরে ধীরে ধীরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন উত্তেজিত স্থানীয় জনতা। রাত ২টার দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে পুলিশ।

এসময় আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যানকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

এদিকে, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর অনেকে আইডিয়াল স্কুলের চেয়ারম্যান ও প্রিন্সিপালের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমফেসবুকে মন্তব্য করছেন-  প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. নুরুর রহমান একজন ধার্মিক মানুষ। তিনি কুরআন শরিফ পুড়ানোর মতো ন্যাক্কারজনক কাজ করতে পারেন না।

প্রকৃত ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

তবে পুুলিশ বলছে- পবিত্র কুরআন শরিফ পুড়ানোর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। রাতে পুলিশের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া না গেলেও সোমবার (৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম)  বলেন- ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ওখানে যাই এবং জানতে পারি- আইডিয়াল স্কুলের চেয়ারম্যান ও প্রিন্সিপাল মাহবুব আলম ও নুরুর রহমানকে রবিবার বিকালে ইসহাক নামের এক ব্যক্তি দুই বস্তা কুরআন শরিফ দিয়ে যান। এর মধ্যে এক বস্তা ছাত্রদের মাঝে বিতরণ করার জন্য আর এক বস্তা পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য। পরে রাত ১০টার দিকে ওই দুজনে মিলে পাশের একটি দোকান থেকে কেরোসিন কিনে এনে ঢেলে দিয়ে এক বস্তা কুরআন শরিফে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় ৪৫টি কুরআন শরিফ পুড়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয় কয়েকজন দেখে ফেলেন। পরে খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় আরও লোকজন উত্তেজিত হয়ে আইডিয়াল স্কুলের ফটকে জড়ো হলে আমরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি এবং মাহবুব আলম ও নুরুর রহমানকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসি।

এক প্রশ্নের জবাবে আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম) বলেন- কুরআন শরিফ পুড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্তরা বলছে, তাদের ভুল হয়ে গেছে। একেক সময় একেক অজুহাত দিচ্ছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। আর তাদেরকে যে ব্যক্তি কুরআন শরিফ দিয়ে গেছে তাকে আমরা গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি। তাকে গ্রেফতার করলে বিষয়টি আরও খোলাসা হবে।