ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মনোনয়ন মিস শঙ্কায় এমপিরা

বায়ান্ন ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৫ জুন ২০২৩ ০৩:৫৪:০০ পূর্বাহ্ন | রাজনীতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় ‘মনোনয়ন মিস’ শঙ্কায় আওয়ামী লীগের নেতা ও দলীয় সংসদ সদস্যরা। চ্যালেঞ্জিং ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে বিতর্কিত ও অজনপ্রিয় নেতাদের এবার মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা, প্রভাবশালী মন্ত্রী  ও শতাধিক সংসদ সদস্যকে দলের প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে না বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। কোনো কোনো সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে  এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ওই আসনগুলোয় যারা ভোট টানতে পারবেন, সাধারণ মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি আছে এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। বেশ কিছু আসনে অধিকতর যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ দিয়ে দলের বিজয়ের সম্ভাবনা বাড়াতেও প্রার্থী পরিবর্তন করবে আওয়ামী লীগ। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতেই এ পরিবর্তন আনবে ক্ষমতাসীন দলটি। দলের একাধিক সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে সংসদে থাকা অনেক সংসদ সদস্য এখনই নিশ্চিত হয়েছেন, তারা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না। এদের কেউ কেউ ‘ঝুঁকি’ এড়াতে এলাকায় গণসংযোগ বাড়িয়েছেন। আবার কেউ কেউ এলাকায় যাওয়া-আসা ছেড়ে দিয়েছেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নিজস্ব লোকের মাধ্যমে, বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সংসদীয় আসনের জরিপ করছেন। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা  পর্যায়ের নেতাদের ডেকে এনে গণভবনে বৈঠক করছেন। সর্বশেষ গত ৫ জুন গণভবনে একাধিক জেলা-উপজেলা ও মহানগর নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে বৈঠকে একাধিক সংসদ সদস্য, দলের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দখলবাণিজ্য, স্থানীয়ভাবে দলকে বিভক্ত করাসহ নানা অভিযোগ তোলেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। জবাবে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার আমলনামা আমি জানি। আমলনামা দেখেই মনোনয়ন দেব। ওই বৈঠক সূত্র জানান, প্রভাবশালী ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ওই তৃণমূল নেতা আরও বলেন, আজ তাঁর বিরুদ্ধে কথা বললাম, কাল থেকে হয়তো আমার ওপর আরও নির্যাতন বেড়ে যাবে। তখন দলীয় সভানেত্রীর পারসোনাল মোবাইল নম্বর দিয়ে বলেন, ‘এখন থেকে তুমি সরাসরি আমাকে ফোন করবে।’ আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জিং ভোটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। বিগত দুটি নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন বেশ কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। সে কারণে যাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত হবে, আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে, তেমন প্রার্থীই বেছে নেওয়া হবে। সে কারণে ‘মনোনয়ন মিস’ হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন অনেক কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে সংসদ সদস্যরা।

 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান  বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা। সে কারণে যাদের কোনো জনপ্রিয়তা নেই, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে, তাদের বাদ দেওয়া হবে। বিভিন্ন জরিপ দেখেই গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

 

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রত্যয়  ও আন্তর্জাতিক মনোভাবে পাল্টে যাচ্ছে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি।  নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ক্ষমতাবানদের পরিবর্তে সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন এবং পদবঞ্চিত, অবহেলিত অথচ ক্লিন ইমেজ প্রার্থীদের জন্য সাধারণ কর্মী ও জনগণের আগ্রহ বাড়ছে বলে একাধিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও নতুন করে ভাবছে বিষয়টি নিয়ে। সংগ্রহ করছে নতুন তথ্য। ইতোমধ্যেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শতাধিক সংসদ সদস্যকে বাতিলের তালিকায় রেখেছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান  বলেন, ‘শুধু সংসদ নির্বাচনই নয়, যে কোনো নির্বাচনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ ধারাবাহিকতায় বর্তমানে যারা সংসদে আছেন, কিন্তু বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন তারা বাদ পড়বেন, এটাই স্বাভাবিক। আর যার গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি, নৌকাকে বিজয়ী করতে সক্ষম হবেন, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। দলীয় সভানেত্রী জরিপের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেবেন।’  

 

আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে প্রতিটি আসনে প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছেন। সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিটি আসনেই পাঁচ থেকে সাতজন প্রার্থীর তালিকা পাঠানো হচ্ছে। তিন মাস পর পর এ তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। সরকারি সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বহু এমপির বিরুদ্ধে অপকর্ম, জন-অসন্তোষ, দলীয় নেতা-কর্মীদের ক্ষোভসহ নানা নেতিবাচক তথ্য উঠে আসছে। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নিজস্ব টিম ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করছে। তারা বহু এমপির জনপ্রিয়তা না থাকার তথ্য পেয়েছে।

 

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, সুষ্ঠু ভোট করার কথা। সোমবার খুলনা-বরিশাল, এর আগে গাজীপুর সিটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচন মাঠের বিরোধী দল বিএনপি বর্জন করেছে। বিএনপি না থাকলেও যোগ্য ব্যক্তিকে প্রার্থী করা হলে মানুষ কেন্দ্রমুখী তার প্রমাণ তিন সিটিতে হয়েছে। গাজীপুরের ফলাফল আওয়ামী লীগের অনুকূলে না এলেও ভোটার উপস্থিতি ছিল আশা জাগানিয়া। অন্যদিকে ভোটার উপস্থিতি ও ফলাফলের দিক দিয়ে বরিশাল-খুলনার বিজয়ে আওয়ামী লীগও ফুরফুরে মেজাজে। খুলনার মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক নির্লোভ, দুর্নীতি থেকে মুক্ত এবং সৎ একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরীক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত। এ ধরনের প্রার্থীরা যে আবার মনোনয়ন পাবেন এবং তাদের ওপর যে শেখ হাসিনা আস্থা রাখবেন- এ বার্তাটি তিনি খুলনায় দিয়েছেন। ফলে খুলনায় জয় ও ভোটার উপস্থিতি হয়েছে। আবার বরিশালে মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত রাজনীতিতে কিছুটা নিজেকে গুটিয়ে রাখলেও ক্লিন ইমেজ থাকায় ভোটাররা তাকে ভোট দিয়েছেন।