বাংলাদেশের প্রকৃতিতে চলছে পাতা ঝরার দিন, চলছে শীতকাল। পৌষের শেষ পেরিয়ে ‘পৌষের শীত তোষের গায়, মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ প্রবাদটির সাথে এবারের শীতের মিল খুঁজে পাওয়া গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও। উত্তরের হিমশীতল হাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে এ অঞ্চলে সর্বত্র ঘনকুয়াশাসহ শীত জেঁকে বসেছে। পৌষের দাপটে কাঁপছে দক্ষিণের জেলা যশোরের শার্শা-বেনাপোল। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন শত শত শীতার্ত মানুষ।
দিন-রাতের তাপমাত্রা কমছে ক্রমেই। সূর্য ডোবার পরপর থেকে সকাল অবধি ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা সারাদেশ। মেঘমুক্ত আকাশে জলীয় বাষ্পও কমে গেছে। সঙ্গে বইছে উত্তরের হিমশীতল হাওয়া। এ হাওয়ায় শীত বৃদ্ধি পেয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এমন শৈত্যপ্রবাহ দুই-একদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে। সব মিলিয়ে বাঘ কাঁপানো মাঘেরই আভাস দিচ্ছে।
যশোর আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, নতুন বছরের শুরু থেকে গত তিনদিনে ক্রমশ তাপমাত্রা কমছে। ফলে যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কনকনে শীতের আমেজ রয়েছে। কনকনে এমন শীতে এ অঞ্চলের জনজীবন জুবুথুবু হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ২ ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। আর ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে অবস্থান করলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। সে অনুযায়ী এখনও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু না হলেও উত্তরের হাওয়ার কারনে ভোর থেকেই অনুভূত হচ্ছে হাড় কাঁপানো তীব্র শীত।
এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাঁচি-কাশিসহ কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অপর দিকে শীতের কারণে সারাদিনই গরম পোশাক পরে মানুষজনকে চলাচল করতে দেখা যায়। সন্ধ্যার পর জনবহুল শহর অনেকটাই শূন্য হয়ে পড়ছে।
এদিকে, হঠাৎ হাড়কাঁপানো এ তীব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। সকাল ৯-১০টার পূর্বে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না তারা। বিশেষ করে ছিন্নমূল মানুষগুলো পড়েছেন চরম বিপাকে। প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে সাময়িকভাবে তারা ঠান্ডা তাড়িয়ে উষ্ণতা খোঁজার চেষ্টা করছেন।
দু’দিনের শীতের তীব্রতায় এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো কাহিল হয়ে পড়েছে। দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমিকের দল যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বেনাপোল স্থলবন্দরে কর্মরত শত শত শ্রমিকরা পণ্য লোড আনলোডে মারাত্মক সমস্যায় পড়ছে। কনকনে শীতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ছে।