![](https://dainikbayanno.com/storage/liton-photo-191224.jpg)
পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে রাখা না গেলে এ বাহিনীর সংস্কার স্থায়ী হবে না। চট্টগ্রামে এক আলোচনা সভায় এমন অভিমত উঠে এসেছে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে বন্দর নগরীর একটি হোটেলে ‘পুলিশ সংস্কার বিষয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা’ শীর্ষক অনুষ্ঠিত আলোচনায় এই বাহিনীতে নিয়োগ, বদলি, বেতনভাতা ও পদোন্নতিসহ নানা বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা নিজেদের অভিমত তুলে ধরেন। মতবিনিময় সভার প্রস্তাবগুলো লিখিত আকারে পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাছে পাঠানোর কথাও বলেছেন আয়োজকরা।
এ আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নেছার উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালের পর থেকে দেশের রাজনীতিবিদরা পুলিশকে কখনো ‘স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়নি’। যারা রাজনীতিবিদ আছে, তারা চান না পুলিশ বাহিনীর সংস্কার হোক। কাজেই আমাদের আগে ‘রাজনৈতিক রিফর্ম’ করা দরকার।
ইউএনডিপির সহায়তায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসা আয়োজিত এ আলোচনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা, চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সাদিকা সুলতানা চৌধুরী, ইপসার পরিচালক (অর্থ) পলাশ চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা ও শ্রমিক নেতা তপন দত্ত, সাংবাদিক জসীম উদ্দিন চৌধুরী সবুজ, কবি-সাংবাদিক ওমর কায়সার, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রিদুয়ান সিদ্দিকী, নীলা আফরোজ, আরিফ মঈনুদ্দীন, তাওহীদ আলিফ বক্তব্য রাখেন।
সভায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশনস) নেছার উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০৭ সালে পুলিশ আইন সংস্কারের কথা উঠলেও হয়নি। কারণ যারা রাজনীতিবিদ আছেন, তারা চান না পুলিশে সংস্কার হোক। কাজেই আমাদের আগে ‘রাজনৈতিক রিফর্ম’ করা দরকার। পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়ার সময় এসেছে বলে মনে করেন নেছার উদ্দিন।
তিনি বলেন, আগে যারা স্বাধীনভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছে, তাদের নানা ধরনের অসুবিধা হয়েছে। তাদের পদোন্নতি হয়নি, চাকরিচ্যুত হয়েছে এবং নানা ধরনের লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিল। পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বাধীন করার প্রস্তাব দেন তিনি। পুলিশ রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র কমিশনের অধীনে থাকুক সে বিষয়টি আমরাও চাই।
এ আলোচনা সভার অন্যতম আলোচক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আবু নোমান পুলিশকে জনবান্ধব করতে ১৮৬১ সালের পুলিশ প্রবিধি পাল্টানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ওই প্রবিধিতে পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব না করে ক্ষমতায়ন করা হয়েছ, যা না পাল্টালে পুলিশকে জনবান্ধব করা সম্ভব নয়। পুলিশের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো গঠনের মতামত দিয়ে তিনি বলেন, সমাজের বিভিন্ন পেশার লোকজন তাদের বেতনভাতা নিয়ে আন্দোলনে নামলেও পুলিশকে কখনো বেতনভাতা নিয়ে আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। অধ্যাপক নোমানের মতে, পুলিশ জনগণের আস্থা হারাচ্ছে। শুধু পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করে সেই আস্থা ফেরানো যাবে না।
পুলিশ সংস্কারের জন্য প্রথমে থানা সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শাহজালাল মিশুক। তিনি বলেন, সব মানুষ সব জায়গায় যেতে চাইলেও পুলিশের আচরণগত কারণে থানায় যেতে চান না। সেজন্য সিভিল সোসাইটির মাধ্যমে সেগুলোর তদারকির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আমীর মুহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, সব জায়গায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে। সেটা ঠিক করতে না পারলে কোনোভাবেই পুলিশ সংস্কার সম্ভব হবে না। রাজনৈতিক আমলাতন্ত্রের কারণে পুলিশ কন্ট্রোল হয়ে যায়। অন্যথায় তারা নিয়ন্ত্রিত থাকার কথা না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কার হচ্ছে। কিন্তু যারা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে আগে তাদের সংস্কার দরকার। আমরা নিজেদের সংস্কার না করলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলো কখনো স্থায়ী হবে না।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ