রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপের দেশগুলোতে কমেছে চিংড়ির দাম। সেইসঙ্গে কমেছে রফতানি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খুলনার চিংড়ি ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পেশা বদল করেছেন।
রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিংড়ি রফতানি বন্ধ ছিল। তখন থেকে চিংড়ি ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। করোনার সংক্রমণ কমলে ২০২১ সালের মার্চ থেকে রফতানি শুরু হয়। এর মধ্য দিয়ে আশার আলো দেখেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে চিংড়ি রফতানিতে আবারও মন্দা দেখা দেয়। রফতানি সচল থাকলেও ইউরোপের দেশগুলোতে কমেছে চিংড়ির দাম। রফতানি ও চিংড়ির দাম কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাত মাস ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনে চিংড়ি রফতানি বন্ধ রয়েছে। ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে রফতানি ও দাম কমেছে। এতে বিপাকে পড়েন রফতানিকারকরা।
খুলনা জেলার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে রাশিয়ায় রফতানি হয়েছিল ৭৩১ টন চিংড়ি। যার দাম পড়েছিল ৫৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রফতানি হয় ২৪০ টন, যার দাম ২০ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে ইউক্রেনে রফতানি হয়েছিল ১১৯ টন চিংড়ি। যার দাম ১১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রফতানি হয়েছে ২৯ টন, যার দাম তিন কোটি ২১ লাখ টাকা। তবে দুটি দেশেই ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে চিংড়ি রফতানি হয়নি বলে জানিয়েছেন রফতানিকারকরা।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ও ইউক্রেনে চিংড়ি রফতানি বন্ধ রয়েছে। করোনার মন্দা ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে এখন যুদ্ধের ধকল চলছে। চিংড়ির ওপর ধারাবাহিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব চলছে। ফলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা ভালো নেই। লোকসানের মুখে অনেকে চিংড়ি চাষ ছেড়ে অন্য মাছ চাষ করছেন। অনেকে মূলধন হারিয়ে জীবিকার জন্য পেশা বদলে ফেলেছেন।’
বিএফএফইএ’র পরিচালক মো. রেজাউল হক বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে ইউরোপের দেশগুলোর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সে কারণে ইউরোপে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি আগের তুলনায় কমেছে। দামও কমেছে। ফলে এই পেশার লোকজন লোকসানের মুখে রয়েছেন।’
খুলনা বিভাগীয় পোনা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পাইকগাছা উপজেলার পরস্কারপ্রাপ্ত ঘের ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া রিপন বলেন, ‘একের পর এক মন্দার কারণে চিংড়ি চাষিরা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। করোনার সংক্রমণ কমার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। ফলে টানা সাত মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেনে চিংড়ি রফতানি বন্ধ আছে। এতে চাষিরা সংকটে পড়েছেন। পোনার সংকট থাকায় উৎপাদনও কমেছে।’
খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে চিংড়ি রফতানি খাতে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি রফতানি আয় বাড়াতে তৎপর রয়েছে মৎস্য অধিদফতর। রফতানিকারকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে খেয়াল রাখছি আমরা। তবে রফতানি পুরোদমে শুরু হলে সংকট কেটে যাবে।’