লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাল্টে দিচ্ছে হতদরিদ্রের জীবন কিছুদিন আগেও যাদের ছিল না কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই, তারা এখন রঙিন টিন আর আধাপাকা বাড়িতে বসবাস করছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর জীবন বদলে দিয়েছে রায়পুর উপজেলার শত শত মানুষের। একটা সময় অন্যের জমিতে দয়া-দাক্ষিণায় থাকা সেই মানুষ আজ আত্মনির্ভরশীল। কৃষি থেকে শুরু করে নানা কাজের মাধ্যমে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাছিয়ার চরে ৪৫টি,কারিমিয়ায় ১১১টি,উদমারা৩৫ টি ,কুচিয়ামোড়া ২২টি,মদিনা বাজার ৪১টি,বামনী ৯৪টি,শিবপুর ১০টি,মীরগঞ্জ ৯টি ,চরমোহরা ২০টি ,উদমারা ৩৪টি সর্বমোট ৩০০টি ঘর প্রদান করা হয়।
সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে এখন বদলেছে ছিন্নমূল মানুষের যাপিত জীবনের। রঙিন টিন আর পাকা দেয়ালের আধাপাকা বাড়িতে করছে শাকসবজির আবাদ। কেউবা করছে হাঁস-মুরগি, ছাগল ও গরু পালন। সন্তানদের পাঠাচ্ছে স্কুলে। বসতির দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছে সংসার। সংসারে এসেছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। বসবাসের জন্য সরকারের দেওয়া এই সুবিধাটি পেয়ে খুশি আশ্রয়হীন এসব মানুষ।
হাজিমারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রুমা আক্তার ২০ বছর আগে ভয়াল মেঘনা নদীর ভাঙনে ভিটেমাটি হারানো রুমা একটা সময় থাকত মানুষের জমিতে ছাপড়াঘরে। রোদ-বৃষ্টির সঙ্গে তার যুদ্ধের শেষ হয়েছে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ঘর পেয়ে।
রুমা আক্তার জানান, আগে অনেক কষ্টে দিন কাটত। এখন জমি আর ঘর পেয়ে কষ্টের দিন শেষ হয়েছে। ঘর পাওয়ার পর আমরা নানা প্রশিক্ষণ পেয়েছি। এ ছাড়া হাঁস-মুরগি, গরু ছাগল পালন করছি। বসতঘরের পাশে সামান্য জমিতে চাষাবাদ করি।
হাফিজ নামে একজন বলেন, কিছুদিন আগেও ভাবিনি নিজের ভালো একটা বসবাসের ঠিকানা হবে, এখন সেটি হয়েছে, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছি, নিজের হাঁস-মুরগি পালনসহ নানা কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, সত্যই এটা স্বপ্নের। এমনটি হবে ভাবিনি, সৃষ্টিকর্তার কাছে হাসিনার জন্য দোয়া করি।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে রুমা-হাফিজের মতো বদলে গেছে দেশের রায়পুর উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০৫টি পরিবারের ভাগ্য। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় এখানে বসবাসকারী সবার।
ঘর দিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিয়ে প্রকল্পে বসবাসকারীদের স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান রায়পুর উপজেলা আরডিও আব্দুর সাত্তার ।
মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাশে মিয়ারহাট এলাকায় ৪৫টি এবং হাজিমারা এলাকায় পুরোনো আশ্রয়ণের পাশে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৪টি ঘরে বসবাস করেন বরাদ্দপ্রাপ্ত অসচ্ছলরা।
তবে সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মিয়ারহাট এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর প্রায় ১৫. ১৬টি ঘর তালাবদ্ধ। ২৪নং ঘরটি শাহজালাল রাহুল নামের স্থানীয় আ.লীগ নেতার কাছে বিক্রি করে বিদেশ চলে যায় ঘর পাওয়া এক ব্যক্তি। একপাশে ২২টি, অন্যপাশে ২৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়।
মিয়ারহাটের আশ্রয়ণের সভাপতি মরন আলী বলেন, এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই বছর ধরে থাকছি। মসজিদ-কবরস্থান খুব দরকার। খুব কষ্টে আমাদের ৪৫ পরিবারকে এখানে থাকতে হচ্ছে।' ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু ফরায়েজিকে সমস্যার কথা বলা হলেও তিনি না শুনার মতই থাকেন সবসময়।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরায়েজী বলেন, এগুলো ইউএনও ও এসিল্যান্ড পরিচালনা করেন। মসজিদ ও কবরস্থানের জন্য বরাদ্দ চেয়েছিলাম ইউএনওর কাছে। তিনি বলেছেন, জায়গা ও বরাদ্দ আসলে ব্যবস্থা করবেন।
রায়পুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি ) মোঃরাসেল ইকবাল বলেন ,আশ্রায়নে ঘর বরাদ্দ নিয়ে কোন অনিয়ম পাওয়া যায় নি। ঘর বরাদ্দে আমাদের একাধিক কর্মকর্তারা সরেজমিনে যাচাই - বাচাই করে বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো। রায়পুরে ঘর নির্মাণ নিয়ে কোন অভিযোগ ছিলোনা।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনজন দাশ জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর মানুষের জন্য আমরা যা কিছু করা দরকার সবই করেছি। ঘর দেয়ার পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আওতায় এনে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করা হযচ্ছে। এ ছাড়া তাদের মাঝে হাঁস-মুরগি,গরু- ছাগল বিতরণ করা হয়েছে। প্রকল্পের পাশেই একটি স্কুল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে ।আশ্রায়ন প্রকল্পগুলোতে অনেক স্বামী পরিত্যক্তা নারী আছেন। তাদের সেলাই মেশিন বিতরণসহ নানাভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করা হয়েছে। এখন তারা নিজেরাই নিজেদের সংসার চালান ।প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়নে আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি। উপজেলা ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের ও গর্বের। অন্জন দাশ আরো বলেন, 'বরাদ্দ পাওয়া ঘরের উপকারভোগীদের বিষয়ে তথ্য নেওয়া হয়েছে। যারা ঘরগুলোতে থাকেন না, তাদের বাদ দেওয়া হবে। কবরস্থান মসজিদ ও জলাবদ্ধতা সমস্যা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা হবে।