দিনাজপুরের হিলিতে অভাব-অনটনের সংসারে নিজের চেস্টায় মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে শিক্ষার্থী রিফাত ইসলাম। অদম্য মেধাবী এই শিক্ষার্থীর ইচ্ছে-শক্তি ছিল বলেই ঘরের চার দেয়ালে মধ্যে লেখা-পড়া করে এলাকায় উদাহরণ সৃস্টি করেছে। কিন্তু অর্থ সংকটে সেই স্বপ্নপূরণ বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ভর্তি অনিশ্চিতায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ রিফাতের পরিবারে।
আজ শনিবার (৯ এপ্রিল) সকালে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদের পাশেই মাঠপাড়া গ্রাম। সেখানে টিনের ছাউনির ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রিফাতের বাবা-মা। দুই ভাইয়ের মধ্যে রিফাত বড়। বাবার ছোট একটি দোকানের উপর টেনে-টুনে সংসারে ৪ জন খানিয়ালা। এভাবে সেই ছোট্র থেকেই বেড়ে উঠা রিফাতের।
প্রতিবেশিরা জানান, পরিবারটি অস্বচ্ছল হওয়ার কারণে রিফাতের ভালো কোন স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি। সে স্থানীয় স্কুল-কলেজে লেখা-পড়া করেছে। আমরা পড়া-লেখায় উৎসাহ দিয়েছি। তাকে বলতাম তুমি পড়া-লেখা করো কোনো সমস্যা হবে না। সেও আমাদের বলত এখানে থেকে লেখা-পড়া করে কিছু হওয়া যায় কিনা চেস্টা করি। রিফাত আরও সাপোর্ট পেলে লেখা-পড়ায় আরও ভালো কিছু করতে পারত।
বাসুদেবপুর সরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হক টুকু জানান, আমাদের বিদ্যালয় থেকে সে পিএসসি ও জেএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। আমরা তার লেখা-পড়ার প্রতি খেয়াল রাখতাম। সে ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছিল।
হাকিমপুর সরকারী কলেজের প্রভাষক আলী ইলিয়াস হোসেন জানান, ২০২১ সালে রিফাত কলেজ থেকে জিপিএ-গোল্ডেন পেয়ে এইচএসসি পাশ করে। ক্লাসে পড়া-লেখায় সে যথেষ্ট মনোযোগী ছিল। সে গভীর রাত পর্যন্ত বই নিয়ে পড়তে বসত। তার ভিতর বই ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। আমি পড়ুয়া ছাত্র হিসেবে তাকে পেয়েছি। আমি ভাবতাম সে ভালো কিছু করবে। তার মেডিকেলে চান্স পাওয়ার খবর পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি।
রিফাতের সাফল্য কামনা করে সোনাপুর উচ্চ ্িবদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, রিফাত মেধাবী ছাত্র। আট-দশজনের মধ্যে সে ছিল ব্যতিক্রম। তার মধ্যে একটি ইচ্ছে-শক্তি ছিল আমি পারব। আমরা তাকে সব সময় উৎসাহ জুগিয়েছি এবং তার কাছ থেকে পজিটিভ কিছু পেয়েছি। সে দেশ ও জাতির সেবা করবে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদান রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
রিফাতের বাবা আমীন ইসলাম জানান, আল্লাহ’র রহমতে সে কুমিল্লা সরকারী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। শিক্ষক, প্রতিবেশি ও সকলের সহযোগিতায় সে এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে। আমার যে আর্থিক অবস্থা, তাতে সম্ভব ছিল না। ছাত্র হিসেবেও রিফাত ভালো ছিল। আমার কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স নাই। কষ্ট করে হলেও তাকে মেডিকেলে ভর্তি করানোর চেষ্টায় আছি। সে যেন মানুষের মত মানুষ হয় তার জন্য সকলে দোয়া করবেন।