ঢাকা, রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীমঙ্গলে সাইনবোর্ড থাকলেও নেই পুলিশ ফাঁড়ি

মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৮ অগাস্ট ২০২৩ ০৯:৩৬:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন
সাইনবোর্ড থাকলেও নেই পুলিশ ফাঁড়ি। এমন একটি পুলিশ ফাঁড়ির দেখা মিলবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌরশহরের পুরাতন বাজারে।
সাইনবোর্ডে লেখা থাকলেও সেখানে পুলিশ ফাঁড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই। ফাঁড়ির জায়গায় বসেছে আলু, পেঁয়াজ, চা-পাতাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান। দোকানিরা কেউ চা পাতা বিক্রি করছেন, কেউ বা পেঁয়াজ। নেই পুলিশের সেবাদাতা বা গ্রহীতার কোনো পদচিহ্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল থানার পাশাপাশি শহরের নিরাপত্তায় পুরাতন বাজারে ছিল একটি পুলিশ ফাঁড়ি। এই ফাঁড়িটি এখন বাণিজ্যিক মার্কেট। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে একেকটি দোকান ঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ছোট-বড় ১৫টি দোকান ঘর রয়েছে মার্কেটটিতে। তবে সেই টাকা কোন অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে তার হদিস দিতে পারেননি পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
তবে জেলা পুলিশের অর্গানোগ্রামে শ্রীমঙ্গল শহর পুলিশ ফাঁড়ি এখনও আছে। সেই পুলিশ ফাঁড়িতে ইনচার্জ হিসেবে একজন উপ-পরিদর্শকসহ (এসআই) তিনজন কনস্টেবলের পদায়নও রয়েছে। এই এসআই ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত থাকলেও তিনি শ্রীমঙ্গল থানায় অবস্থান করে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মাণাধীন দোকানের বরাদ্দ ও ভাড়া তোলার কাজ করেন।
জানা যায়, মৌলভীবাজার থেকে সদ্য বদলি হওয়া পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া জেলায় যোগদানের পর পুলিশ ফাঁড়িতে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেন। পুলিশ সদর দফতরের কোনো প্রকার অনুমোদন ও দরপত্র ছাড়াই মৌলভীবাজারের বিভিন্ন প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে এই মার্কেট নির্মাণ করেন। তবে মার্কেটের নামে কত টাকা অনুদান নিয়েছেন এবং কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসাব মেলেনি।
ফাঁড়িকে মার্কেট রূপান্তর করার ক্ষেত্রে পুলিশ সদর দফতরের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল কিনা সেটা জানাতে পারেনি জেলা পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। পুলিশের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে কানাঘুষা আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অফিসার বলেন, শ্রীমঙ্গল ফাঁড়ির নামে একজন পরিদর্শক পদায়ন হওয়ার কথা। শহর অনেক বড় হওয়ায় এখানে ফাঁড়ি খুব প্রয়োজন ছিল। এছাড়া শ্রীমঙ্গল সার্কেল অফিসের কোনো নিজস্ব ভবন নেই। আবাসন সমস্যা রয়েছে পুলিশের। ফাঁড়ি অপ্রয়োজনীয় মনে হলে যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদন নিয়ে এই জায়গাটিতে আবাসনের জন্য বা সার্কেল অফিস করা যেত।
সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল পুলিশ ফাঁড়ির জায়গার ওপর পাকাঘর নির্মাণ করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা ঘর নেওয়ার আগে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে একেকটি ঘর ভাড়া নিয়েছেন। তাদের অগ্রিমের টাকা থেকে ৮০ শতাংশ ভাড়া হিসেবে প্রতি মাসে কর্তন হবে। কিন্তু অগ্রিমের টাকা সরকারের কোন কোষাগারে দেওয়া হয়েছে তা তারাও বলতে পারেননি।
মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়েছেন মিটন পাল। তিনি জানান, আমি অগ্রিম টাকা দিয়েছি আমার টাকার ৮০ শতাংশ প্রতিমাসে ভাড়া হিসেবে কাটা হবে, বাকি ২০ শতাংশ প্রতিমাসে দেই। এই ফাঁড়িতে কাগজ-কলমে কর্মরত আছেন উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমান। তিনি মার্কেটের ভাড়া তোলেন।
এ বিষয়ে জিয়াউর রহমান বলেন, আমি ২ মাস আগে বদলি হয়ে গেছি এখান থেকে। এর আগে ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলাম। ভাড়া আমি তুলি না। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা বলতে পারবেন।
প্রধান হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা খুরশেদ আলম বলেন, ব্যবসায়ীরা কত টাকা অগ্রিম হিসেবে জমা দিয়েছেন এবং কোন অ্যাকাউন্টে দিয়েছেন, সেটা আমি বলতে পারব না। তবে তারা মাসিক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া দেন।
জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জাহাঙ্গির হোসেন সরদার বলেন, উপর মহলের সিদ্ধান্ত, তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে চাইলে মার্কেটের পেছনে জায়গা আছে এবং থানাতেই প্রচুর জায়গা আছে, সেখানেও করা যাবে।
বর্তমানে ফাঁড়িতে কাগজ-কলমে কেউ কর্মরত আছেন কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, এসআই একজন ছিলেন। তিনি এখন অন্য বিভাগে আছেন। তবে কনস্টেবল কর্মরত আছেন ফাঁড়িতে। কতজন কনস্টেবল সেখানে আছেন এ তথ্য নিশ্চিত জানাতে পারেননি তিনি।
মৌলভীবাজারে সদ্য যোগ দেওয়া পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান বলেন, সাধারণত অনুমতি ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। তবে ফাঁড়ির বিষয়টি নিয়ে আমি এখনই কোনো তথ্য নিশ্চিত করতে পারছি না। যেহেতু আমি নতুন যোগদান করেছি, তাই বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখব।