সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় মাত্র দশ দিনের ব্যবধানে আবারও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৮ পরিবারের ৮টি বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ ৩০ লাখেরও বেশি টাকা। নিজেদের মাথাগোঁজার ঠাঁই, নগদ টাকা, ধান-চাল, হাঁস-মোরগ, দলিলপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি হারিয়ে পথে বসেছে এসব পরিবারের সদস্যরা। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দিবাগত রাত ৯টায় উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের আক্তাপাড়া বড়হাটি গ্রামে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে শান্তিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো। রাত ৯টার দিকে আক্তাপাড়া বড়হাটি গ্রামের জমসেদ আলীর ছেলে রহিম উদ্দিনের ঘরের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে কোনো না কোনোভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা দাউদাউ করে জ্বলে উঠে। নারিকেল, সুপারি গাছের মগডাল পর্যন্ত উঠেছে আগুনের শিখা। আগুনের তাপে মানুষ কাছে ভিড়তে পারে নি। তবুও স্থানীয় মানুষ সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন। কোনো কিছুতেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। কোনো উপায় না দেখে আগুন থেকে বাঁচাতে মৃত আবারক আলীর মেয়ে গৃহকর্মী নূরুন নাহারের ঘরটিকে ভেঙে সরিয়ে নিয়েছেন স্থানীয়রা। যদিও সে ঘরে আগুন লাগেনি, ভেঙে না সরালে নূরুন নাহারের ঘরও ভস্মীভূত হয়ে যেতো। ফায়ার সার্ভিস আসার পরে তাদের ঘন্টাখানেক সময়ের চেষ্টায় আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডে এই গ্রামের ৮টি পরিবারের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন- মৃত আবদুল মতলিবের ছেলে জমসেদ আলী, জমসেদ আলীর ছেলে রহিম উদ্দন, বোরহান উদ্দিন, মৃত আহাদ উল্লাহ’র ছেলে নূরুল ইসলাম, তার ছেলে আক্তার হোসেন, আবদুল হান্নানের ছেলে কালামন মিয়া, মৃত আবদুল করিমের স্ত্রী দিলারা বেগম ও নূরুন নাহার। স্থানীয় একাধিক মানুষ, জনপ্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ও ক্ষতির শিকার পরিবারের লোকজন জানান, রহিম উদ্দিনের ঘরের গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। এ ঘটনায় সব মিলিয়ে ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
ক্ষতির শিকার হওয়া বোরহান উদ্দিন বলেন, আমি ও আমার ভাই ব্যবসায়ী মানুষ। দু’জনের ঘরে প্রায় ২০ লাখ টাকা নগদ ছিলো। আসবাবপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সবকিছু আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। আমরা একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
অপর ক্ষতিগ্রস্ত কালামন মিয়া ও নূরুল ইসলাম বলেন, আমাদের আর কিছুই রইলো না। সব শেষ। জীবনে আর কি নিয়া বাঁচমু। দিন আনি দিন খাই, এখন নতুন করে কীভাবে ঘরদোর করবো আর সংসার গোছাবো? আমাদের সব শেষ। নগদ টাকা, ধান, স্বর্ণালংকার কিছুই বের করতে পারিনি। আমরা এখন নিঃস্ব।
দরগাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড সদস্য সুরুজ আলী, একই ওয়ার্ডের প্রাক্তন সদস্য সালেহ আহমদ বলেন, আগুন দেখে মনে হয়েছে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। নিমিষেই সব শেষ। যদি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি না আসতো আরও ঘরদোর পুড়ে যেতে পারতো। যে পরিবারগুলোর ঘর পুড়েছে তারা অসহায় মানুষ। তাদের এখন সর্বস্তরের মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন।
শান্তিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার জিসান রহমান নাবিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যাই। প্রায় একঘন্টাব্যাপী চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ্ জামান। তিনি বলেন, খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছোটে এসেছি। আগুনে পুড়ে ক্ষতি হওয়া প্রতিটি পরিবারের লোকজনদের সাথে কথা বলেছি। দুঃখজনক একটি ঘটনা ঘটলো। আমরা তাদের সান্ত্বনা দিয়েছি। আশ্বস্ত করেছি, যত দ্রুত সম্ভব আমরা তাদের কিছু টিন ও নগদ টাকা দেওয়ার চেষ্টা করবো।