নাম নীল হলেও মেলায় এসেছে সাদা জামা আর জিন্স পরে। নীলের সঙ্গে এসেছে তার মা আর নানা-নানুও। মেলায় ঢোকার পরে প্রথমেই নীল এসেছে শিশুচত্বরে। খুব কাছ থেকে দেখা করেছে হালুম, টুকটুকি, শিকু আর ইকরির সঙ্গে।
কথা হলে নীল বলে, আমি টিভিতে প্রতিদিন সিসিমপুর দেখি। কিন্তু হালুম টুকটুকিকে কাছ থেকে কখনো দেখা হয়নি। এবারই প্রথম। নীলের পুরো নাম নীলাবজা ইসলাম। রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন প্রিপারেটরি স্কুলের প্রথম শ্রেণির এ ছাত্রী জানায়, নানুর কাছে প্রতিদিন গল্প শোনে সে। সেই গল্পের মধ্যেই বইমেলার কথা শোনা। এরপর এবারই প্রথম বইমেলায় আসা তার। আর কেনা হবে ২/৩টি বইও।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়। এদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর। বইয়ের প্রতি শিশুদের আগ্রহ সৃষ্টিতে বইমেলায় শুক্র ও শনিবার পালিত হবে শিশুপ্রহর। এ সময়ে শিশুরা তাদের অভিভাবকসহ মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরে বই সংগ্রহ করতে পারবে এবং শিশুরা এ সময়টি কাজেও লাগিয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হলে নীলাবজার নানা নিজাম উদ্দিন তালুকদার বলেন, বইয়ের প্রতি আগ্রহী আর সুষ্ঠু বিনোদনের জন্যই শিশুদের বইমেলায় আনা। ওদের নিয়ে বেশ কিছু বই আমি মেলায় ঢোকার সময়ই দেখেছি। সারাদিন মেলায় ঘোরা হবে আজ, এ সময়ের মধ্যে এক এক করে বইগুলো কিনে নেব।
প্রকাশকরাও জানাচ্ছেন অন্য সময়ের তুলনায় এবার মেলাতে বইয়ের প্রতি শিশুদের আগ্রহ বেড়েছে। তারা মোবাইল রেখে আস্তে আস্তে বইমুখী হচ্ছে।
এ বিষয়ে শিশুচত্বরের মেলা প্রকাশের প্রকাশক এম এস দোহা বলেন, গতবার তো আমরা করোনার জন্য আশানুরূপ ফল পাইনি, অর্থাৎ মেলাটা সেভাবে জমেছিল না। তবে গতবারের তুলনায় এবার মেলা ভালো হচ্ছে এবং লোক সমাগম অনেক বেশি। সব মিলিয়ে এবারের মেলাকে ইতিবাচক মেলা বলা যায়।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন করোনার জন্য একটা বড় সময় শিশু-কিশোররা বই থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। এ জায়গাটা মোবাইল-ইন্টারনেট দখল করে নিয়েছে। তবে এখন সেগুলো থেকে বেরিয়ে তারা বইমুখী হচ্ছে। এটা ভালো দিক।
চিলড্রেন বুকস সেন্টারের সত্ত্বাধিকারী জগলুল সরকার বলেন, মেলার প্রথম প্রহরে শিশুরা না এলে আমাদেরও ভালো লাগে না। বই বিক্রি বড় বিষয় না, কিন্তু আমরা শিশুদের বই প্রকাশ করি, তাদের জন্য কাজ করি, এমন অবস্থায় শিশুরা এলে আমাদের ভালো লাগে। শিশুরা আসছে বাবা-মায়ের হাত ধরে, তারা বই দেখছে, কিনছে। এটা ভালো দিক, আমাদেরও ভালো লাগছে।
এদিকে শুক্রবার মেলার শুরু থেকেই বইপ্রেমীরা আসতে থাকেন দলবেঁধে। সন্তানদের বই কিনে দেওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকরাও নিজেদের পছন্দের বইটি সংগ্রহ করেছেন স্টলে ঘুরে ঘুরে। আর বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতের ঝড়-বৃষ্টি খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি বইমেলায়। সকালে সোহরাওয়ার্দীর মাঠে কয়েকটি স্টলের বই রোদে শুকাতে দেখা গেলেও ঝড়-বৃষ্টিতে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি বলেই জানিয়েছেন তারা। প্রকাশকরা আশা রাখছেন ছুটির দিনে মেলা হবে আরও জমজমাট, বাড়বে বিক্রিও।