ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, দেশের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করতে হবে। আগে বিচার—সংস্কার হবে তারপরে নির্বাচন। তার আগে কোনভাবেই নির্বাচন দেওয়া যাবে না।
সরকারকে অবিলম্বে ‘Proclamation of July Revolution’ দিতে হবে। ৭১—এ মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ঠিক সেইভাবে ২৪—এ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
গতকাল সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিলোপ, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণ এবং ‘প্রোক্লেমেশন অফ জুলাই’ রেভুলিউশনের জন—আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ছাত্র সমাবেশ করে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এর আগে ছাত্র সমাবেশ দুপুর ২টা থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী সমর্থকরা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও প্লাকার্ড নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে যোগ দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, যারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষের রক্ত ও জীবনকে বিন্দুমাত্র মূল্য দেয় না তাদেরকে বাংলার মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দেশের মানুষের জীবনের দিকে আর যদি কোন শকুন দৃষ্টি দেয় তাহলে তার চোখ উপড়ে ফেলবো আমরা। হোক সে দেশের ভিতরের শক্তি বা বাইরে শক্তি।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের শহীদ ভাইদের হত্যার বিচার চাই। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসবে ঠিকই। তবে সে দেশে এসে সরাসরি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে। বাংলাদেশে একটি যৌক্তিক সময় নির্বাচন হবে। তবে তার পূর্বে এই খুনি হাসিনার ধ্বংস করা সিস্টেম গুলোকে সিস্টেমগুলোকে সংস্কার করতে হবে। এই বাংলাদেশ আর কোন নতজানু পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাস করেনা। আমরা চোখে চোখ রেখে আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে চলতে চাই। পৃথিবীর কোন বহিঃশক্তি যদি আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের চেষ্টা করে তাহলে আমরা সেই পররাষ্ট্রনীতি ছুঁড়ে ফেলবো।
ছাত্রনেতা সারজিস আলম বলেন, আমরা একটি জুলাই অভ্যূত্থানের ঘোষণাপত্র দিয়েছি। সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জুলাই অভ্যূত্থানের স্বীকৃতি থাকতে হবে। এই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি সংবিধানের লিপিবদ্ধ থাকতে হবে। ঘোষণাপত্রে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের কথা স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাবেশে কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, গত দেড় দশক ধরে হাসিনা দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছে। আমাদের দেশটাকে নেতৃত্ব শূন্যতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
এখন পর্যন্ত আমাদের এই বিপ্লবকে অনেকে মেনে নিতে পারে নাই। সেই জন্য কিছু দিন পরপর আমরা দেখি, বিচার বিভাগে কু’করা হয়, পুলিশে কু’করা হয়, আনসারের বিদ্রোহ হয়, সচিবলায়ে আগুন লাগানো হয়। আমরা সবাইকে বলতে চাই, আপনারা রিয়ালিটি মাইনা নেন। এই বৃহত্তর ফরিদপুরবাসী যতদিন জেগে আছে, খুনি হাসিনা আর বাংলার মাটিতে ফিরতে পারবে না।
প্রবীণ রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে হাসনাত বলেন, আমরা দীর্ঘ সময় ধরে বিভাজনের রাজনীতির মধ্যদিয়ে বেড়ে ওঠেছি। আমাদের বিভাজনের রাজনীতির মধ্যে রেখে, আমরা জাতীয় ঐক্যে কখনো বসতে পারেনি। পূর্বের রাজনীতিবিদদের রাজনীতিক প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতাকে আমরা তরুণ প্রজন্ম সম্মান জানাই। এই তরুণ প্রজন্মের যেই আত্মবিশ্বাস ও ফ্যাসিবাদকে বাংলাদেশ থেকে উৎখাতি করার জন্য তাদের প্রত্যয়, আপনাদের প্রজ্ঞার সাথে তাদের এই প্রত্যয়ের যদি আপনারা সম্মেলন না ঘটাতে পারেন, তাহলে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা ব্যর্থ হবো। তাই আপনারা এই তরুণ প্রজন্মকে স্বীকৃতি দিন।
তিনি বলেন, অতীতে ঢাকার ক্ষমতার চেয়ারে কে বসতে, সেটি নির্ধারণ হতো দিল্লি থেকে। আমাদের নতজানু পরাস্ট্রনীতির কারণে, আমরা দেখেছি নির্বাচনের আগে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সবাই দিল্লি মুখি হতো। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই বাংলাদেশে ঢাকার মসনদে কে বসবে, সেটি দিল্লি থেকে নির্ধারিত হবে না। বরং সীমান্তের মধ্যে সেটি নির্ধারণ করবে জনগন। দেশের জনগনই ঠিক করবে কে ঢাকার মসনদে বসবে। আপনারা দিল্লি মুখি না হয়ে দেশের জনগন মুখি হন।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম, আরিফ সোহেল, আশরেফা, ফরিদপুরের অন্যতম সমন্বয়ক সোহেল রানা, কাজী রিয়াজ, ফারহান আহসান অর্ণব, নাবিলা তালুকদার, তাহসিন হাসান দ্বীন, মাহমুদুল হাসান ওয়ালিদ, সানজিদা রহমান সমতা, জেবা তাহসিন, শাহ মো. আরাফাত প্রমূখ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুরের সমন্বয়করা বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় ফরিদপুরে বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী লেলেজা সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। এই সকল সশস্ত্র হামলার সাথে জড়ি অপরাধীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখনো অনেকে আমাদের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আন্দোলনে আহত অনেকে পারিবারিক কারণে থানায় মামলা করতে পারেনি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আন্দোলনের উপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা ফরিদপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জেলা ও জেলার বাইরে নিহত ৮ জন শহীদ পরিবারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করে তাদের খোজ খবর নেন। এ সময় কয়েকজন আহতরা ছাত্ররাও উপস্থিত ছিলেন।