উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহত্তম সবজির মোকাম হিসেবে খ্যাত বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থান সবজির পাইকারি হাট। এ হাটের পাইকাররা সবজি সংগ্রহ করে সারা বছরই দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। কিছু দিন আগেও যে সবজির বাজার ছিল ক্রেতাদের কেনাকাটায় স্বস্তি। সেই বাজার বর্তমান অগ্নিমূল্যে পরিনত।
ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের পাশে মহাস্থান হাটের অবস্থান হওয়ায় যুগ যুগ ধরে কাঁচা বাজারের জন্য জেলার কৃষকরা এই হাট কেই বেছে নেয়। হাটে সবজির দাম কৃষকের হাত বদল হয়ে একটু দূরের খুচরা বাজারে যেতেই দাম হয়ে যায় দুই থেকে তিন গুণ। এই কারণে কৃষক এর চেয়ে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বতভোগীরা। আগাম শীতের হরেক রকমের সবজি। শীতের আগেই ভরে গেছে শীতের সবজির বাজার।
গতকাল মহাস্থান হাটে পাইকারি সবজি বাজার সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাস্থান হাটে সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় সবজির পাইকারি বাজার। আর এই বাজারে হাত বদল হলেই সবজির দাম কেজি প্রতি বেড়ে যায়। প্রায় সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। বাজারে নাকাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। আকষ্মিক চড়া বাজারে এসে পাইকারদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সবজির বাজারে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ক্রেতা বিক্রেতারা জানান, টানা মাত্রাতিক্ত বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন কমে গেছে।গাছের গোড়ায় পানি আটকে গাছ পঁচন ধরে নষ্ট হচ্ছে চাহিদার তুলনায় ফলন কম তাই দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মহাস্থান হাটে পাইকারি মুলা মান অনুযায়ী কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আলতাবাদ বেগুন মানভেদে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা প্রতি কেজি। করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, শসা ৫০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ ২৬০ টাকা, ধনেপাতা ১৭০ টাকা, করলা ৬০ টাকা কেজি, কাঁকরোল ৬৫ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটল ৫০-৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, বই কচু লতি ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি পিস মাচা লাউ ৫০ টাকায়, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, লেবু হালি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা করে।
বিশাল জায়গা মৌসুমি সবজিতে ঠাসা। কৃষক অটোভ্যান, ভটভটি, অটেরিকশায় করে সবজি এনে হাটে নামাচ্ছেন। বস্তায় ভরে কাঁধে নিয়েও আসছেন কেউ কেউ। সাধারণ ক্রেতা ছাড়াও হাটে পাইকারদের ভিড়। ভালো মানের সবজি প্রথমেই কৃষকের কাছ থেকে কিনে পাইকাররা হাটের এক পাশে জড়ো করছেন। এরপর ট্রাকে সাজানো হচ্ছে থরে থরে। গন্তব্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বাজারের পাইকারি আড়ৎদাররা জানান, মহাস্থান থেকে প্রতিদিন সবজি বোঝাই ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক রাজধানী সহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতায় মুখরিত থাকে হাটটি। মহাস্থান থেকে প্রতিনিয়ত কয়েক হাজার টন সবজি ঢাকা, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিত সরকার বলেন, কৃষি বিপ্লব শশ্যভান্ডার এলাকা শিবগঞ্জ। এই এলাকার মাটি খুবই উর্ব্বর সব ফসল সকল আবহাওয়ায় মানিয়ে নেয়। অত্র এলাকার কৃষকরা ঐতিহাসিক মহাস্থান হাটেই তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে থাকে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে না তাকায় সবজির ফলন কম হওয়ায় বাজার চড়া।